আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ও হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো রবিবার ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্য করে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থ জোগানে নাকি ভারত ‘সরাসরি হাত লাগাচ্ছে’ বলে অভিযোগ তোলার পাশাপাশি নাভারো ভারতের বর্ণব্যবস্থাকেও টেনে আনেন। তাঁর দাবি— “ভারতের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় জনগণের ক্ষতির বিনিময়ে মুনাফা লুটছে।” ফক্স নিউজে তীব্র মন্তব্য করেন তিনি। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাভারো ভারত সরকারের নীতিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “ভারত হল শুল্কের মহারাজা। বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করে তারা আমেরিকান শ্রমিক, করদাতা এবং ইউক্রেনের মানুষদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মোদি  একজন শক্তিশালী নেতা হলেও কেন তিনি পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন, তা আমি বুঝতে পারি না।”

তিনি আরও যোগ করেন— “ভারতের মানুষকে বুঝতে হবে আসলে কী ঘটছে। আপনারা দেখছেন, ব্রাহ্মণরা জনগণের ক্ষতির বিনিময়ে মুনাফা করছে, এবং আমরা চাই এটি বন্ধ হোক।” পিটার নাভারো শুধু বাণিজ্য নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও সরাসরি ভারতকে দায়ী করেন। ট্রাম্পের এই উপদেষ্টা ইউক্রেন যুদ্ধকে “মোদির যুদ্ধ” আখ্যা দিয়ে বলেন— “ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য পুতিনের যুদ্ধের খাজানায় টাকা ভরছে। ভারত এখন প্রতিদিন এক মিলিয়নেরও বেশি ব্যারেল পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম রপ্তানি করছে—যার অর্ধেকেরও বেশি আসে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল থেকে। এর লাভ যাচ্ছে ভারতের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শক্তি-ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে, আর সরাসরি ঢুকছে পুতিনের যুদ্ধ ভাণ্ডারে।”

শুল্ক নিয়ে নতুন সংঘাতে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ভারত মার্কিন সম্পর্কে। গত সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের সিদ্ধান্ত। নাভারো ছিলেন এই কঠোর শুল্কনীতির মূল স্থপতি। তাঁর মতে, ভারত যদি রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করে তবে শুল্ক আরও বাড়ানো হবে।মোদির চিন সফরের প্রেক্ষাপতে এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নাভারোর এই মন্তব্য আসে এমন সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চিন সফরে গিয়েছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চিনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। এটি ছিল সাত বছর পর মোদির প্রথম চিন সফর।

আরও পড়ুন: কমিউনিস্ট পার্টির দপ্তরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? বৈঠকও করলেন! কী কী বিষয়ে জোর দেওয়া হল?

যদিও ভারতের পাল্টা জবাব দিয়েছে। ভারত সরকারের তরফে অবশ্য নাভারোর এই অভিযোগকে ভণ্ডামি বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। এক সরকারি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেন— “ইউরোপ এখনো রাশিয়ার গ্যাস কিনছে, আমেরিকা রাশিয়ার ইউরেনিয়াম আমদানি করছে। অথচ ভারতকে সমালোচনা করছে! ভারত দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে, আন্তর্জাতিক কাঠামো মেনেছে এবং বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।”

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাভারোর মন্তব্য কেবল বাণিজ্য বা ভূ-রাজনীতি নয়, ভারতীয় সমাজব্যবস্থার ওপরও সরাসরি আক্রমণ। বর্ণ টেনে এনে রাজনৈতিক ভাষ্য দেওয়ার ঘটনা বিরল। ফলে মার্কিন-ভারত সম্পর্কের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন আরও প্রকট হলো। এভাবে নাভারোর মন্তব্য একদিকে মার্কিন-ভারত বাণিজ্য সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতীয় সমাজ কাঠামো নিয়েও নতুন বিতর্ক উস্কে দিল।