আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের কুলগামে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হয়েছেন দুই সেনা জওয়ান, আহত হয়েছেন আরও দু’জন। শনিবার নবম দিনে পা দিল ‘অপারেশন আখাল’। বলা হচ্ছে, এই অপারেশন উপত্যকার দীর্ঘতম সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মধ্যে অন্যতম। অভিযানের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১০ জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনার চিনার কর্পস জানিয়েছে, শহিদ জওয়ানরা হলেন ল্যান্স প্রীতপাল সিং এবং সিপাই হরমিন্দর সিং। চিনার কর্পস এক টুইটবার্তায় জানিয়েছে, ‘জাতির সেবায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী সাহসী যোদ্ধা ল্যান্স প্রীতপাল সিং ও সিপাই হরমিন্দর সিংকে স্যালুট। তাঁদের সাহস ও নিষ্ঠা আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে। ভারতীয় সেনা গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং শহিদদের পরিবারের পাশে রয়েছে। অভিযান অব্যাহত’।

উল্লেখ্য এই জঙ্গি দমন অভিযান গত ১ আগস্ট শুরু হয়েছিল। নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণ কাশ্মীরের আখাল এলাকার জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনী চিরুনি তল্লাশি চালায়। তখন থেকেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। ইতিমধ্যেই পাঁচজনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। সেনা সূত্রে জানা গেছে, অন্তত তিনজন সন্ত্রাসবাদী এখনও ঘন জঙ্গলের মধ্যে প্রাকৃতিক গুহার মতো আস্তানায় লুকিয়ে রয়েছে। ঘন জঙ্গল, পাথুরে এলাকা ও গুহার মতো আশ্রয় সেনার অভিযানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্যারা কমান্ডো ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদীদের খোঁজ চলছে। অভিযান শুরুর পর থেকেই এলাকায় তীব্র গুলি বিনিময় ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। সেনার মুখোমুখি হচ্ছে অত্যাধুনিক নাইট-ভিশন ডিভাইস ও লং-রেঞ্জ রাইফেল সজ্জিত লস্কর-ই-তইবা সন্ত্রাসবাদীরা। আখাল গ্রামের বহু বাসিন্দা নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। শিশু ও মহিলারা বিশেষভাবে আতঙ্কিত। জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য স্থানীয় প্রশাসন নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে।

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 9, 2025

প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ের হামলার পর জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। সেই হামলায় পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা ২৬ জন সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তার পাল্টা অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি তছনছ করে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। ‘অপারেশন আখাল’ শুরু হয় ‘অপারেশন মহাদেব’-এর ঠিক পরদিন। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের লস্কর জঙ্গিদের শ্রীনগরের দাচিগাম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী খতম করে। ২৯ জুলাই, ‘অপারেশন শিব শক্তি’তে আরও দুই সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করা হয়। সব মিলিয়ে, ২২ এপ্রিলের হামলার পর থেকে প্রায় ২০ জন হাইপ্রোফাইল সন্ত্রাসবাদীকে নির্মূল করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। উল্লেখ্য, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এর আগে ভারতীয় সেনা এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে অপারেশন মহাদেব শুরু করে। ভারতীয় সেনার চিনার কর্পস তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে অপারেশন মহাদেব সম্পর্কে তথ্যও দেয়।

একটি পোস্টে তারা জঙ্গিদের তল্লাশিতে ওপি মহাদেব চালুর কথা জানায়। পরে আরও একটি পোস্টের মাধ্যমে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানায়, ‘তীব্র গুলির লড়াইয়ে তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে’। এর আগে গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলায় ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল সেদিন। নৃশংস জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল উপত্যকা। প্রাণ গিয়েছিল ২৬ জন সাধারণ মানুষের। ৭ মে পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত হানে ভারত। অপারেশন সিঁদুর। ১৯৭১-এর পর প্রথমবার একযোগে তিন সেনা বাহিনীর হামলা পাকিস্তানের উপর। অপারেশন সিঁদুরের পরেই, জানানো হয়, বুধবার, রাত ১টা ৪৪ নাগাদ হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। হামলা চালানোর পর সেনাবাহিনী বিবৃতিতে স্পষ্ট জানায়, পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে আক্রমণ চালানো হয়েছে, যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।