আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বাংলাদেশি সন্দেহে নিগ্রহের একাধিক ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। দিল্লি ,মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ওড়িশা-সহ একাধিক রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে কখনও পুলিশ কখনও বা স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। বাংলাদেশি সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থায়ী বাসিন্দাকে জোর করে বাংলাদেশে 'পুশ ব্যাক' করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে  বিএসএফের বিরুদ্ধে।  এই আবহে এবার ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক পাঠাতে না পেরে এবং দীর্ঘদিন কর্মহীন হয়ে বসে থাকার পর আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল এক ব্যক্তি।

রবিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার পুলিশ পুরসভার নেতাজী পার্কের কাছে নিউ হসপিটাল রোড এলাকা থেকে একজনকে একটি ৭ এমএম পিস্তল,একটি পাইপ গান, দু'টি ম্যাগাজিন,১৫ রাউন্ড গুলি এবং ৫৫০ গ্রাম বারুদ-সহ গ্রেপ্তার করল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃত ব্যক্তির নাম হাসিবুর রহমান ওরফে সেন্টু।  এসডিপিও (বেলডাঙা) উত্তম কুমার গড়াই বলেন,'ধৃতের  বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ২৫ এবং ২৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি কোথা থেকে এত পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র  এবং বারুদ পেয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত হাসিবুরের ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে সোমবার তাকে বহরমপুর আদালতে পেশ করা হচ্ছে।'

আরও পড়ুন: গুলির পাহাড়, সঙ্গে বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র, খড়দহের আবাসনে হানা দিয়ে চোখ কপালে পুলিশের

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বছর বিয়াল্লিশের হাসিবুর দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রাজমিস্ত্রি সরবরাহের 'কন্ট্রাক্টর' হিসেবে কাজ করত। গত প্রায় ২৬ বছর ওই ব্যক্তি মুম্বাইতে বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থায় প্রথম দিকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরবর্তীকালে তিনি রাজমিস্ত্রির সরবরাহের 'কন্ট্রাক্টর' হয়ে ওঠেন। তবে বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বেলডাঙার জানকিনগর গ্রামে নিজের বাড়িতেই থাকতেন। এসডিপিও বলেন,' সম্প্রতি আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই হাসিবুর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার রাতে বেলডাঙা থানার সাদা পোশাকের পুলিশের একটি দল নেতাজি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় হানা দেয়। সেখান থেকেই ওই ব্যক্তিকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

তিনি জানান,' ধৃত ব্যক্তি আগে নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ,তবে সম্প্রতি তিনি বেলডাঙাতেই থাকছিলেন।' সূত্রের খবর, হাসিবুর দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদেরকে ভিন রাজ্যে কাজে নিয়ে যেতেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনায় সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত নিজের জেলায় ফিরে চলে আসছেন। এর ফলে হাসিবুরের ভিন্ন রাজ্যে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার ব্যবসায় ভাঁটা পড়েছে বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাসিবুর অস্ত্র ব্যবসায় নিজের হাত পাকানোর কাজ শুরু করেছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এনে সে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের কাছে বিক্রি করছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ,হাসিবুরের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র এবং বারুদ সবই  বিহারের মুঙ্গের জেলায় তৈরি করা হয়েছিল। এরপর হাত বদল হয়ে সেগুলো হাসিবুরের কাছে এসে পৌঁছয়। এসডিপিও জানান ,'ধৃত ওই ব্যক্তি নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে কোনও বিবাদের জন্য ওই ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করে রেখেছিল কিনা তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। জেলার অন্য কোনও থানায় হাসিবুরের বিরুদ্ধে কোনও মামলা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন,' হাসিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি এবং পাচারের এই চক্রের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন জড়িয়ে রয়েছে। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের তল্লাশি জারি রয়েছে। অন্যদিকে অপর একটি ঘটনায় মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার পুলিশ রবিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভাটকান্দা গ্রামে অভিযান চালিয়ে আশরাফুল শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃত ব্যক্তির হেফাজত থেকে একটি দেশি পাইপ গান এবং একটি ১২ বোরের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃত আশরাফুল কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছে এবং কী  উদ্দেশ্যে তা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।