আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকমাসে একের পর এক ঘটনায় শিরোণামে ওড়িশা। বেশিরভাগ ঘটনাতেই প্রশ্ন উঠছে সে রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে। তথ্য, ১৯ জুলাই পুরীতে নাবালিকার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, মৃত্যু হয়েছে ওই নাবালিকার। তবে তার পরেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত প্রসঙ্গে যে তথ্য সামনে এনেছে, তাও অবাক করা।
নাবালিকার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন, সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মোহন চরণ মাঝি শোক প্রকাশ করেছেন ঘটনায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, 'বালঙ্গা ঘটনায় মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে দুঃখিত। সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টা এবং দিল্লির এইমসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তার জীবন বাঁচানো যায়নি।'
ঘটনার পরেই, ওই নাবালিকার মা, পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কয়েকজন মিলে তাঁর মেয়েকে অপহরণ করার পরে, গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ সেই অভিযগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে। সূত্রের খবর, পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে বড় তথ্য। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিবৃতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে প্রাপ্ত তথ্য, এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত নয়। পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, 'বালাঙ্গার ঘটনায় ওই কিশোরীর মৃত্যুর খবর শুনে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত পরিচালনা করেছে। তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত পরিচালিত তদন্ত অনুসারে, এটি স্পষ্ট যে অন্য কোনও ব্যক্তি জড়িত নয়। অতএব, আমরা সকলকে অনুরোধ করছি এই দুঃখজনক মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করার জন্য।'
ঘটনার সূত্রপাত ১৯ জুলাই। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, ওডিশার পুরী জেলার বালাঙ্গা থানার অন্তর্গত এলাকায় ঘটে এই ঘটনা। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ঘটনার দিন তিনজন বাইক আরোহী প্রথমে ওই তরুণীকে অপহরণ করে। পরে তারা মেয়েটিকে ভরগবী নদীর তীরে নিয়ে যায়। বাইবর গ্রাম সংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তরুণীর গায়ে প্রথমে একটি দাহ্য পদার্থ ঢালে৷ এরপর তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা চেঁচামেচি শুনে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যান। তাঁরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করেন। এরপর পিপিলির একটি স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় তরুণীকে। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে এইমস (AIIMS) ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। তরুণীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার (২০ জুলাই) তাঁকে দিল্লির এইমসে এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।

১৯ জুলাইয়ের ঘটনার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন ওড়িশার উপমুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী প্রভাতি পারিদা। এক্স পোস্টে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তিনি। লিখেছেন, "পুরী জেলার বালঙ্গা অঞ্চলের একটি ১৫ বছরের কিশোরীকে রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানোর ঘটনা জেনে আমি স্তম্ভিত ও মর্মাহত। তাকে দ্রুত এইমসে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।'
পুরীর এই নৃশংস ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই, গত ১২ জুলাই, বালেশ্বরের ফকির মোহন (স্বায়ত্তশাসিত) কলেজ ক্যাম্পাসে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ২০ বছরের এক ছাত্রী। অভিযোগ, কলেজের এক সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ হয়ে ওই ছাত্রী ওই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ১৪ জুলাই রাতে ভুবনেশ্বর এইমস-এ তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয় পরিস্থিতি। ঠিক তার পরেই এই ঘটনা ঘটে সে রাজ্যে।
