আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী শুক্রবার বিস্ফোরক অভিযোগ করে দাবি করেন, “ভোট চুরি” চলছে এবং সেই চক্রান্তে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের হাত রয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমাদের হাতে এমন প্রমাণ আছে যা পরমাণু বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটাবে— এতে পুরো দেশ বুঝে যাবে কমিশন কিভাবে বিজেপিকে জেতাতে ভোট চুরির সুবিধা করে দিচ্ছে।”

রাহুলের অভিযোগ:
সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাহুল বলেন, “এখন আমাদের কাছে ওপেন অ্যান্ড শাট কেস। কমিশন বিজেপির পক্ষে ভোট চুরিতে সহায়তা করছে— একথা আমি ১০০% নিশ্চিত হয়ে বলছি। আমরা আমাদের নিজস্ব তদন্ত করেছি, ৬ মাস ধরে। যে তথ্য আমরা পেয়েছি, সেটাই সেই ‘অ্যাটম বোম্ব’। এই প্রমাণ সামনে এলে নির্বাচন কমিশন দৃশ্যমানই থাকবে না।”

তিনি আরও বলেন, “মধ্যপ্রদেশ, লোকসভা এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে আমরা সন্দেহ করেছিলাম। মহারাষ্ট্রে ১ কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছিল। এরপর আমরা নির্বাচন কমিশনের থেকে সাহায্য না পেয়ে নিজস্ব তদন্ত করি। যাঁরা এই চক্রান্তে জড়িত— উপর থেকে নিচ পর্যন্ত— তাঁরা কেউ রেহাই পাবেন না। তাঁরা দেশবিরোধী কাজ করছেন, এটা দেশদ্রোহিতা। অবসরপ্রাপ্ত হলেও আমরা খুঁজে বার করব।”

কমিশনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া:
নির্বাচন কমিশন একই দিন এক বিবৃতি প্রকাশ করে রাহুলের অভিযোগকে 'ভুল এবং বিভ্রান্তিকর' বলে আখ্যা দেয়। কমিশন জানায়, “২০২৪ সালের নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত ১০টি নির্বাচনী পিটিশন জমা পড়েছে, যার একটিও কংগ্রেসের কোনো পরাজিত প্রার্থী জমা দেননি।” কমিশন আরও বলে, “লক্ষ লক্ষ নির্বাচনী আধিকারিককে একসঙ্গে দায়ী করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে হুমকি ও অপপ্রচার চালানো অত্যন্ত দুঃখজনক। সময়মতো আইনি পথ না নিয়ে এখন মিডিয়ার মাধ্যমে এমন অভিযোগ তোলা দুঃখজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।”

কেন্দ্রের কড়া প্রতিক্রিয়া:
সংসদ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাহুলের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বারবার আক্রমণ করছেন রাহুল গান্ধী। এটা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে মোদি যখন প্রথমবার জিতেছিলেন, তখন তো আমাদের সরকার ছিল না। কংগ্রেস কেরল, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গে জিতেছে— তখন কীভাবে?” রিজিজুর মন্তব্য, “যখন কংগ্রেস হারে, তখন নির্বাচন কমিশনকে দোষ দেয়। যখন আদালতের রায় পছন্দ হয় না, তখন বিচারব্যবস্থাকে দোষারোপ করে। এটা গণতন্ত্র দুর্বল করার গভীর ষড়যন্ত্র।”

আগের অভিযোগ:
গত মাসেও কর্ণাটকের একটি আসন ঘিরে অনিয়মের ‘১০০% কংক্রিট প্রমাণ’ রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন রাহুল। তখন নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগ ‘ভুল এবং প্রমাণহীন’ বলে খারিজ করে দেয়। কর্ণাটকের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানান, “ভুল সংযোজন বা অপসারণের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী আপিল করার সুযোগ আছে। কিন্তু কোনও আপিল জমা পড়েনি।”

আরও পড়ুন: বৃষ্টির জলে তলিয়ে স্কুল, ফের ছুটি ঘোষণা ব্যান্ডেল বিদ্যামন্দিরে নিকাশির দুরবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-অভিভাবক মহল

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে, তবে সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর মতে, কমিশন বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে ভোট চুরিতে সহায়তা করছে, যাতে বিজেপি নির্বাচনে লাভবান হয়। মহারাষ্ট্রে এক কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হওয়া, মধ্যপ্রদেশে অনিয়ম, এবং কর্ণাটকে ভোটার তালিকায় সন্দেহজনক সংযোজন— এসবই নাকি সেই আঁতাতের অংশ। কমিশন যদি সত্যিই বিজেপির পক্ষে কাজ করে, তবে তা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য গভীর হুমকি। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা, কিন্তু যদি সেটি শাসকদলের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তাহলে সাধারণ নাগরিকের ভোটাধিকার প্রশ্নের মুখে পড়ে। কমিশনের কাজ হওয়া উচিত সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি সমদৃষ্টিতে আচরণ করা। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি, যাতে সত্য উদ্ঘাটিত হয় এবং গণতন্ত্রে মানুষের আস্থা অটুট থাকে।