প্রত্যেক জীবের মৃত্যু অনিবার্য। যার জন্ম হয়েছে, তার মৃত্যু হবেই। তবে মৃত্যু ঠিক কবে এবং কীভাবে আসবে, তা আমরা কেউ জানি না। যখন-যেভাবেই আসুক, মৃত্যু একদিন আসবেই। জন্ম এবং মৃত্যু এই দুই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যি কেউ পরিবর্তন করতে পারেননি। কিন্তু শীঘ্রই নাকি এই চির সত্যের বদল ঘটতে চলেছে! তবে কি আগামী দিনে অমরত্ব পাবে মানবজাতি? মৃত্যুর পরও বেঁচে ওঠার আশায় শুরু হয়েছে এক চমকে দেওয়া পরিষেবা।
জার্মানির বার্লিনভিত্তিক স্টার্টআপ 'টুমরো বায়ো' নতুন এক অভিনব পরিষেবা চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মৃত্যুর পর মানুষের শরীর বা মস্তিষ্ক হিমায়িত অর্থাৎ ক্রায়োপ্রিজারভেশন করে সংরক্ষণ করছে। ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে মৃতদের ফের জীবিত করতে এই ব্যবস্থা শুরু করেছে সংস্থা।
ঠিক কীভাবে হয় এই কাজ? কোম্পানির দাবি, মৃত্যুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স টিম এসে মৃতদেহ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় কোষের ক্ষয় রোধ করতে শরীরকে দ্রুত ঠান্ডা করা হয়। যার জন্য মৃত্যুর পরই তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাই চিকিৎসক কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার পরই তাঁর মরদেহটির ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। মৃত্যুর পর দ্রুত দেহ সংরক্ষণ করতে কোম্পানির তরফে ২৪ ঘণ্টার জন্য রেসপন্স টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মৃতদেহ বা মৃতের মস্তিষ্ককে সুইজারল্যান্ডের বিশেষ ট্যাংকে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটি স্টোরেজ ইউনিটে সংরক্ষণ করা হয়। যেখানে বিদ্যুৎ ছাড়াই দীর্ঘ বছর ধরে সংরক্ষণ সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির আশা, ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে যখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে মৃত মানুষকেও আবার বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুনঃ রাতারাতি পাঁচ রাশির ভাগ্যে 'জ্যাকপট'! অর্থ-যোগে সাফল্যের স্বাদ, টাকার বৃষ্টিতে খুলবে কপাল
যদিও কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুনর্জীবনের কোনও নিশ্চয়তা নেই, তবে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হয়তো একদিন মৃতদের ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা অর্জন করবে। ইতিমধ্যে 'টুমরো বায়ো'-র তরফে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ শরীর সংরক্ষণের খরচ প্রায় প্রায় ২ কোটি টাকা এবং শুধু মস্তিষ্ক সংরক্ষণের খরচ ৬৭ লক্ষ। এছাড়া সদস্যপদ বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৬ জন মানুষ ও ৫টি পোষা প্রাণী সংরক্ষণ করেছে। বর্তমানে ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষ এই প্রোগ্রামে নাম লিখিয়েছেন।

কিন্তু সত্যিই কি অমরত্ব পাওয়া সম্ভব নাকি কেবলই শূন্য প্রতিশ্রুতি? ক্রায়োনিক্স নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ এবং এই পদ্ধতির সমালোচনাও রয়েছে অনেক। যদিও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ক্রায়োনিক্স বর্তমানে পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা। এখনও পর্যন্ত হিমায়িত অবস্থা থেকে কোনও মানুষকে জীবিত করা সম্ভব হয়নি। অনেক বিশেষজ্ঞ এই ধারণাকে বিজ্ঞান নয়, বরং কল্পবিজ্ঞান হিসেবে দেখছেন।
