আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণা করেছে। এক স্বামীর হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ৬৪ বছর বয়সী প্রাক্তন রসায়ন অধ্যাপিকা মামতা পাঠক। সূত্রে জানা গিয়েছে, যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখা হয়েছে তাঁর। বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল ও দেবনারায়ণ মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে মামলাটির আপিল শুনানির পর।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে মধ্যপ্রদেশের ছাতরপুরে নিজ বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় ডঃ নীরজ পাঠকের। প্রথমে পুলিশ এই ঘটনাকে বৈদ্যুতিক শকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসে কিছু সন্দেহজনক অজানা তথ্য। এর ভিত্তিতে মামতা পাঠকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়।
২০২২ সালের জুন মাসে ছাতরপুর জেলা আদালত মামতা পাঠককে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সূত্রে জানা গিয়েছে পরে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন এবং নিজেই নিজের পক্ষ থেকে আইনি লড়াই লড়েন। এপ্রিলে জব্বলপুর বেঞ্চে শুনানির সময় তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে যুক্তি দেন যে, তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বৈজ্ঞানিক অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বৈদ্যুতিক শক, দগ্ধ চিহ্ন ও মৃত্যু-পরবর্তী শরীরের অবস্থা সংক্রান্ত নানা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। এরপর তিনি নিজের বক্তব্য প্রমাণ করতে চিকিৎসা-আইন সম্পর্কিত বই ও জার্নালের উদাহরণ দেন।
তিনি বলেন, 'তাপীয় দগ্ধ ও বৈদ্যুতিক দগ্ধ প্রায়শই দেখতে এক রকম মনে হয়। একে সঠিকভাবে আলাদা করতে হলে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ও ধাতব কণার জমাট গবেষণার প্রয়োজন ছিল, যা এখানে করা হয়নি।' তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্তে ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগে মৃত্যুর কথা বলা হলেও শরীরে পচন বা গন্ধের কোনও লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হাইকোর্ট তাঁর এই যুক্তিগুলিকে গ্রহণ করেনি। আদালত জানায়, ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পার্থক্য অনুযায়ী দেহে পচন ধরার সময় ভিন্ন হতে পারে। তাই কেবলমাত্র পচনের অনুপস্থিতি ময়নাতদন্তের নির্ভরযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে না। এছাড়া আদালত এ'কথাও উল্লেখ করে যে, বৈদ্যুতিক শকে মৃত্যুর ক্ষেত্রে শরীরের পরিবর্তন অনেক সময় দেরিতে প্রকাশ পায় এবং এটি কীভাবে ভোল্টেজ দেওয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে।
রায় ঘোষণার সময় আদালত জানায়, মামতাদেবী অত্যন্ত সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে আদালতে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তবে তাঁর পেশাগত দক্ষতা ও বিজ্ঞানচর্চা আদালতের দৃষ্টিতে অপরাধ লঘু করতে পারে নি। আদালত জানায়, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত ও গুরুতর। ঘটনার জেরে তাঁর সাজা উপযুক্ত।
সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের রায়ের পর মামতা পাঠককে মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানের দেখাশোনার জন্য অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্ট এবার সেই জামিন প্রত্যাহার করে তাঁকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে।
