আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৬৪ খোপের পৃথিবীতে ভারতীয় কন্যার জয়জয়কার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন দিব্যা দেশমুখ। হারালেন স্বদেশীয় কোনেরু হাম্পিকে। তারুণ্যের কাছে হার মানল অভিজ্ঞতা।
কোনেরু হাম্পি যেবছর গ্র্যান্ড মাস্টার হন, তার তিন বছর পরে দিব্যার জন্ম হয়। তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতার লড়াই ছিল টানটান। রক্তের গতি বাড়িয়ে দেওয়া ফাইনাল জিতে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না দিব্যা। কোনেরু হাম্পির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার পরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। চোখ থেকে ঝরঝর করে বেরিয়ে এল আনন্দাশ্রু। ছুটে গেলেন তাঁর মায়ের কাছে। মেয়ের এই লড়াইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জর্জিয়ার বাতুমিতে ছিলেন মা। মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। মায়ের বাহুলগ্না হওয়ার পরেও মেয়ের চোখ দিয়ে নেমে আসে অশ্রু।
এদিকে দিব্যা দেশমুখ দাবার নতুন রানি। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসতে থাকে অভিনন্দন বার্তা। তবুও দিব্যা মায়ের সঙ্গ ত্যাগ করেননি। প্রথম মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে দিব্যা জিতে নিলেন মহিলাদের ফিডে চেস বিশ্বকাপ। সোমবার টাইব্রেকারে দ্বিতীয় র্যাপিড গেমে জয় পান তিনি। নাগপুরের মেয়ে দিব্যা। তাঁর মা-বাবা দু'জনেই চিকিৎসক। দিব্যার বড় দিদি ব্যাডমিন্টন খেলেন। দিব্যা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ''আমার দিদি ব্যাডমিন্টন ক্লাসে যেত। একদিন আমার মা-বাবাও আমাকে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে আমার বয়স ছিল চার-পাঁচ। ব্যাডমিন্টন নেটের নাগাল পাচ্ছিলাম না। ওই একই বিল্ডিংয়ে দাবা শেখানো হত। আমার মা-বাবা আমাকে দাবায় ভর্তি করে দেন।'' এই ঘটনা না ঘটলে আজকের দিব্যা দেশমুখকে দেশ পেত কিনা কে জানে!
শনি ও রবি অনুষ্ঠিত হয় দুটি ক্লাসিক্যাল গেম। দুটি ম্যাচই ড্র হওয়ায় ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। সেই টাইব্রেকার জিতে দিব্যা ছড়িয়ে দিলেন দীপ্তি। কোনেরু হাম্পির বয়স ৩৮। আর দিব্যার ১৯। তরুণীর সম্বল ছিল আগ্রাসী মনোভাব। তার জোরেই দিব্যা জিতলেন। ২০২০ সালে ফিডে অনলাইন অলিম্পিয়াডে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন দিব্যা। ২০২২ সালে মহিলাদের উওমেন্স ইন্ডিয়া চেস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন তিনি। একই ইভেন্টে ২০২২ সালে ব্যক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জ পান।
আরও পড়ুন: 'আরে গোরে কো টিকা দিয়া রে', এবার স্টোকসকে বোল্ড করলেন বিগ বি, নিমেষে ভাইরাল অমিতাভর পোস্ট
Divya’s hug to her mom says everything ❤️#FIDEWorldCup @DivyaDeshmukh05 pic.twitter.com/jeOa6CjNc1
— International Chess Federation (@FIDE_chess)Tweet by @FIDE_chess
পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এশিয়ান উওমেন্স চ্যাম্পিয়ন হন দিব্যা। ২০২৪ সালের জুনে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চেস গার্লস চেস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিজয়কেতন ওড়ে বিশ্বকাপেও। দিব্যাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ''ম্যাচ শেষ করা আমাকে শিখতে হবে। আমার মনে হয়েছিল একসময়ে আমি গোলমাল পাকিয়ে ফেলব।''
দ্বিতীয় র্যাপিড গেমে’ হাম্পি সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেন। কুইন্স গ্যাম্বিট দিয়ে শুরুও করেছিলেন। কিন্তু কালো ঘুঁটি নিয়ে দিব্যা ছিলেন আরও আক্রমণাত্মক। খেলার এক সময়ে ৮ মিনিট এগিয়ে গিয়েছিলেন দিব্যা। ভুল চাল দেওয়ায় চাপ বাড়তে থাকে হাম্পির উপরে। আর অভিজ্ঞ হাম্পি ভুল চাল দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগান দিব্যা। ৩৪ নম্বর চালেই শেষ হয় খেলা। নতুন রানি হন দিব্যা। চ্যাম্পিয়ন তো হলেই সেই সঙ্গে গ্র্যান্ডমাস্টারও হয়ে গেলেন ১৯ বছরের তরুণী। তিনি যে গ্র্যান্ডমাস্টার হবেন, এমন কল্পনা কোনওদিনও করেননি দিব্যা। তিনি বলছেন, ''আমার মনে হয় ভাগ্যই আমাকে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাবটা এভাবে দিয়েছে কারণ এর আগে আমার একটাও নর্ম ছিল না। এই টুর্নামেন্টের আগে, আমি ভাবছিলাম, কোথায় নর্ম পাব? আর এখন আমি একজন গ্র্যান্ডমাস্টার!''
????????????????????’???? ???????????????????? ???????????????????? ???????????? ????????????????????????????????♟️????!
— All India Radio News (@airnewsalerts)
Divya Deshmukh became the 4th Indian woman to earn the title of Grandmaster with her victory at the FIDE Women’s World Cup 2025.
Divya secured the title after her victory over fellow Indian #HumpyKoneru in the… pic.twitter.com/Ms6myJUWtCTweet by @airnewsalerts
এত বড় সাফল্যের দিন আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন না দিব্যা। তিনি বরং নিজের লক্ষ্যটা স্থির করে রাখছেন। শতরঞ্জ কে খিলাড়ি হওয়ার পরে দিব্যাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ''এই সাফল্য আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। তবে এখনও অনেক কিছু জেতার আছে। বলা যেতে পারে এটাই শুরু।''
আরও পড়ুন:'একের পর এক ভুল করছে আবার চড়া গলায় কথা বলছে, গলার স্বর নামাও', গম্ভীরকে একহাত নিলেন মঞ্জরেকর
