আজকাল ওয়েবডেস্ক: নৃশংসভাবে খুন করা হল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে। কুপিয়ে খুনের পর তাঁর দেহ একটি বস্তায় ভরে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার কফিনবন্দি সেই দেহ এল তাঁর বাড়িতে। মৃত শ্রমিক আবুবক্কর মণ্ডল (৩৩) উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা ছিলেন। গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকবছর আগে কাজের খোঁজে ওই যুবক মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেখানেই কাজের পাশাপাশি তিনি থাকতেন মহারাষ্ট্রের ভাসি থানার ওয়াসিগাওতে। পেশায় আবুবক্কর ছিলেন রাজমিস্ত্রি। বিয়ের পর স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে যান তিনি। জানা গিয়েছে, গত ২০ জুলাই রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই তাঁর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তাঁর পরিবার। যোগাযোগ করতে চেয়ে বারবার ফোন করলেও ফোন সুইচড অফ পাওয়া যায়। গোটা রাত উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর তাঁর পরিবারের পরদিন সকালেও খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু সারাদিন খুঁজেও ওই পরিযায়ী শ্রমিকের কোনও খোঁজ মেলেনি। 

আরও পড়ুন: ‘আমি অবাঙালি বাংলায় থেকে তা বুঝতে পারি না’, রাজ্যের প্রশংসা করে বাঙালি-বিদ্বেষকে আক্রমণ কীর্তির ...

পরিবারের পক্ষ থেকে এরপর ভাসি থানায় যোগাযোগ করা হয়। সেখানেই তাঁর নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয়। তদন্তে নামে ওই থানার পুলিশ। গত মঙ্গলবার আবুবক্কর যেখানে থাকত তার বেশ কিছুটা দূরে একটি ডোবার মধ্যে বস্তাবন্দি তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেখা যায় দেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আবুবক্করের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা এসে দেহটি শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের জন্য দেহটি পাঠিয়ে দেয় পুলিশ‌। 

ময়নাতদন্তের পর কফিনবন্দি ওই পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দেহ এসে পৌঁছেছে বাদুড়িয়ায় রুদ্রপুরে তাঁর বাড়িতে‌। দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। দাবি তোলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। 

রাজ্য সরকারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে কাতর আবেদন করা হয় তারা যেন খুনের সঙ্গে জড়িত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই আবুবক্করের দেহ কবর দেয় তাঁর পরিবার। জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে মহারাষ্ট্রের পুলিশ।

দেশের বিভিন্ন রাজ্য বা বলতে গেলে মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক আঘাত নেমে এসেছে বাংলাভাষী মানুষের উপর। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের উপর এই অত্যাচার বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। কখনও মারধর আবার কখনও তাঁরা যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার জল, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া। এমনকী বাংলাদেশি সন্দেহে থানায় আটকে রেখে অত্যাচারের বিষয়টিও উঠে এসেছে‌। উপযুক্ত নথি বা বৈধ প্রমাণপত্র দেখিয়েও নিস্তার পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, কোনও প্রমাণপত্রই মানতে চায়নি ভিন রাজ্যের পুলিশ। 

গত ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি এই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন এরাজ্যের মানুষ বা বিশেষত বাংলাভাষী মানুষের উপর এই অত্যাচার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বিজেপির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলা হয়, এরাজ্যেও বহু মানুষ আছেন যারা অন্য রাজ্য থেকে এখানে এসে থাকছেন। যদি তাঁদের উপর এখানে কোনও অত্যাচার না হয় তবে কেন অন্য রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর হবে! গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল নেত্রী তাঁর দলের নেতাকর্মীদের 'ভাষা আন্দোলন' গড়ে তোলার ডাক দেন।