সারা দিন চলে ছোটাছুটি, টিভি-মোবাইলে পছন্দের কার্টুন-গেম খেলার আবদার। আর পড়তে বসলেই যত বাহানা! এটা চাই, ওটা চাই-কত্ত কী! সঙ্গে কিছুতেই পড়া মনে রাখতে পারে না সন্তান। ঘরে ঘরে খুদেকে নিয়ে এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন মা-বাবারা। এদিকে পড়াশোনায় মন না বসলে স্কুল থেকে আসতে থাকে অভিযোগের পাহাড়। আপনারও কি সন্তানকে নিয়ে এই সমস্যায় পড়তে হয়? তাহলে শুধু পড়াশোনা নয়, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের উপরও নজর দেওয়া জরুরি। আসলে শিশুর জন্মের পর থেকে কৈশোর পর্যন্ত যেভাবে বেড়ে ওঠে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মস্তিষ্কের বিকাশ। যার নেপথ্যে শুধু জেনেটিক নয়, একইসঙ্গে দৈনন্দিন অভ্যাস ও পরিবেশেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে এমনই কয়েকটি অভ্যাস জেনে নিন-
১. স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারঃ শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য অপরিহার্য। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ফল, সবজি, বাদাম, মাছ এই ধরনের খাবার মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মস্তিষ্কের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুদের খাবারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাহলেই শরীর, মন এবং স্মৃতিশক্তির সঠিক বিকাশ হয়।
২. নিয়মিত শরীরচর্চাঃ শিশুরা যেন প্রতিদিন শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। দৌড়ানো, খেলাধুলা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের বিকাশেও সহায়ক। এতে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ে।
৩. স্ক্রিন কম, খেলাধুলো বেশিঃ টিভি বা মোবাইলের পরিবর্তে শিশুদের বাস্তব জীবনের খেলায় অংশ নিতে উৎসাহিত করা উচিত। খেলনা, গল্পের বই, পাজল, ছবি আঁকা—এসব সৃজনশীল কাজ শিশুর বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। স্ক্রিন টাইম সীমিত না রাখলে মনোযোগ কমে যেতে পারে, ঘুমের সমস্যা বা আবেগীয় অসামঞ্জস্য দেখা দিতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুমঃ ঘুম শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের প্রতিদিন অন্তত ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম না হলে শেখার ক্ষমতা ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. শিশুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগঃ শিশুর সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কথা বলা, তাদের অনুভব বোঝা এবং আবেগের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া খুবই জরুরি। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এবং মানসিক বিকাশ শক্তিশালী হয়।
মনে রাখবেন, শিশুর মস্তিষ্ক শুধু প্রাকৃতিক নিয়মে গড়ে ওঠে না, একইসঙ্গে বাবা-মায়ের পরিচর্যা, অভ্যাস গঠন ও পরিবেশ তাদের মানসিক বিকাশের পথ প্রশস্ত করে। সুষম খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলা, ঘুম ও আবেগগত সংযোগ-এই ছোট ছোট বিষয়গুলো শিশুদের ভবিষ্যতের ভিত গড়ে তোলে। সন্তানের জীবনে কিছু ভাল অভ্যাস তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা তাদের শারীরিক, মানসিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশে সাহায্য করে। বাবা-মায়ের উচিত ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাসগুলো তাদের সন্তানদের মধ্যে গড়ে তোলা।
