আজকাল ওয়েবডেস্ক:  আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তাঁর নিশানায় পড়লেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। Truth Social প্ল্যাটফর্মে একটি এআই-নির্মিত ভিডিও পোস্ট করে ট্রাম্প দাবি করলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” সেই ভিডিওতে ওবামাকে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এফবিআই হাতে গ্রেপ্তার করতে দেখা যায় — যা নিয়ে আমেরিকাজুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তোলপাড়।

এই ভিডিওটি নিছক একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং গভীর বার্তা বহন করছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভিডিওটি শুরু হয় ওবামার নিজের একটি উক্তি দিয়ে, যেখানে তিনি বলছেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি প্রেসিডেন্টও নয়।” এরপর জো বাইডেন-সহ একাধিক ডেমোক্র্যাট নেতার একই ধরণের উক্তির সংকলন দেখানো হয়।

এরপরই আসে সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ — ওভাল অফিসে ওবামাকে হাতকড়া পরিয়ে এফবিআই গ্রেপ্তার করছে, আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাম্প হালকা হাসি দিচ্ছেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখা যায়, ওবামা কারাগারের ইউনিফর্ম পরে জেলে। সব মিলিয়ে একটি নিখুঁত এআই প্রযুক্তিতে তৈরি 'ডিপফেক' ভিডিও — যা বাস্তবের সঙ্গে মিলে যাওয়ার মতোই ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনে তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জেরেমি করবিন, ভোটাধিকারের বয়স কমানোর সিদ্ধান্তের মাঝেই নয়া সমীক্ষা

ভিডিওর মধ্যে ‘Pepe the Frog’ নামক ডানপন্থী মিমকে ক্লাউন অবতারে তুলে ধরা হয়েছে, যা ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করার লক্ষ্যে ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এটি Epstein কাণ্ড থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল হতে পারে।

ট্রাম্প-ওবামা সংঘাতের নতুন অধ্যায়

এই ভিডিও প্রকাশ এমন এক সময়ে এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা অধিকর্তা টুলসি গ্যাবার্ড (Tulsi Gabbard) অভিযোগ করেছেন যে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়কে খাটো করতে ওবামা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তথ্যচালিত হেরফের করেছেন। তাঁর দাবি, ওবামা প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে 'রাশিয়ান হস্তক্ষেপ' নিয়ে মিথ্যা গোয়েন্দা তথ্য তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে ট্রাম্পকে 'অবৈধ' জয়ী হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল।

টুলসি গ্যাবার্ড আরও দাবি করেন, ওবামা এবং তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত। ট্রাম্পও এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন।

অতীতের সৌহার্দ্য ও বর্তমানের সংঘর্ষ

তবে সবকিছুই যেন এক মুহূর্তে বদলে গিয়েছে। কারণ চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ট্রাম্প ও ওবামাকে বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতায় দেখা যায়। সেই মুহূর্তের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ট্রাম্প বলেন, “দেখে মনে হচ্ছিল যেন আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। হয়তো আমরা করি।”

কিন্তু সেই সৌহার্দ্য যে ক্ষণস্থায়ী ছিল, তা এখন স্পষ্ট। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর ডেমোক্র্যাট শিবির কড়া সমালোচনায় মুখর। একাধিক পর্যবেক্ষক একে ‘উস্কানিমূলক’, ‘আবশ্যক রাজনৈতিক বিভ্রান্তি’, এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সব মিলিয়ে, মার্কিন রাজনীতিতে আবারও ট্রাম্পের উগ্র ঘরানার প্রভাব স্পষ্ট, যেখানে বাস্তব ও কল্পনার বিভাজন দিন দিন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনায় এআই এবং রাজনীতির সমন্বয়ে নতুন বিপদের ইঙ্গিতও দেখছেন বিশ্লেষকরা।