আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটানা ভারী বৃষ্টি। হড়পা বান ও মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত গোটা হিমাচল প্রদেশ। বাড়ছে মৃত্যুমিছিল। এখনও নিখোঁজ বহু বাসিন্দা। এদিকে ভারী বৃষ্টির হাত থেকে এখনই মিলবে না রেহাই। বরং অতি ভারী বৃষ্টিতে আরও বিপর্যয়ের আশঙ্কা। 

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্ষার শুরু থেকেই হিমাচল প্রদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্ভোগ কমবে না‌। চলতি সপ্তাহ জুড়ে আবারও প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে জেলায় জেলায়। প্রায় সব জেলাতেই সতর্কতা জারি রয়েছে। 

এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে মৃত্যুমিছিল জারি রাজ্যে‌। দুর্যোগের ঘনঘটায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে হড়পা বান ও ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের জন্য আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নদী, ঝর্ণার কাছে যেতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। রাজ্য ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একটানা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। অতি প্রবল বৃষ্টির মাঝে কখনও কখনও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। জেলায় জেলায় মোতায়েন রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একাধিক টিম‌। 

আরও পড়ুন: এ কেমন মা! চলন্ত বাস থেকে ছুড়ে ফেললেন সদ্যোজাতকে, কারণ শুনে তাজ্জব সকলে

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, হিমাচল প্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, ২০ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশ জুড়ে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারী বৃষ্টির জেরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের। বাকি ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে। 
হড়পা বানে ভেসে, মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে, ধসে চাপা পড়ে, জলে তলিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, গাছ চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। 

রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এও জানিয়েছে, রাজ্য জুড়ে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উঁচু জায়গা থেকে নীচে পড়ে ১২ জনের মৃত্যু, জলে তলিয়ে গেছেন ১১ জন, হড়পা বানে ভেসে গেছেন আরও আটজন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের এবং সাপের ছোবলে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ধসে চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। 

কমবেশি সব জেলাতেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পথ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে কুলু, মান্ডি, কিন্নরে। সাতজন কুলুতে, পাঁচজন মান্ডিতে এবং পাঁচজন কিন্নরে প্রাণ হারিয়েছেন। পাশাপাশি আরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সাধারণ মানুষ। 

প্রশাসনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ২৯৩টি পাকা বাড়ি এবং ৯১টি কাঁচা বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ৮৫০ হেক্টর চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের খুঁটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে ৮১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

এদিকে মৌসম ভবন জানিয়েছে, আজ, বুধবারেও হিমাচল প্রদেশের জেলায় জেলায় অতি প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। সিমলা, সোলান মান্ডি, সিরমুর, কাঙ্গরায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশ জুড়ে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উনা, কাঙ্গরা, মান্ডি, সোলান, সিমলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি চলবে‌। জুলাইয়ের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে হিমাচল প্রদেশে। প্রতিবছর বর্ষায় ভোগান্তির চিত্র প্রকাশ্যে আসে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারান বহু মানুষ। চলতি বছরেও তার অন্যথা হল না‌।