আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি ত্রিপুরার এক তরুণী দিল্লিতে আশ্চর্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। ত্রিপুরার দক্ষিণাঞ্চলের ছোট শহর সবরুমের বাসিন্দা এই তরুণী। পুলিশ জানিয়েছে ১৯ বছর বয়সী স্নেহা দেবনাথ গত ৭ জুলাই নিখোঁজ হন রাজধানী শহর দিল্লি থেকে। খবর অনুযায়ী দিল্লির আত্মারাম সনাতন ধর্ম কলেজের স্নাতক স্তরের ছাত্রী ছিলেন স্নেহা। খবর পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন ভোরে স্নেহা রুমমেটকে জানান তিনি এক বান্ধবী পিটুনিয়ার সঙ্গে সেরাই রোহিলা রেলওয়ে স্টেশনে যাচ্ছেন। খবর অনুযায়ী ভোর পৌঁনে ছ'টা নাগাদ পরিবারের সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয় তাঁর। এরপর থেকে হঠাৎ তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সকাল পৌঁনে ন'টা নাগাদ পরিবারের সদস্যরা আবার ফোন করতে গেলে তাঁর ফোন বন্ধ পান। এহেন অবস্থায় তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা পিটুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন স্নেহা আদৌ তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। এতে পরিবারের সন্দহয়। প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই খোঁজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে একজন ক্যাব চালকের সন্ধান পান তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে ওই ক্যাবচালক নিশ্চিত করেন ঘটনার দিন স্নেহাকে তিনি সকালে নামিয়ে দিয়েছিলেন দিল্লির সিগনেচার ব্রিজ এলাকায়। খবর পাওয়ার পরই বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
আরও পড়ুনঃ স্ত্রী অন্য প্রেমের সম্পর্কে'! রাগে হিংসায় ছুরি দিয়ে কোপ স্বামীর, কন্নড় অভিনেত্রীর ভয়াবহ পরিণতি
সিগনেচার ব্রিজ চত্বর দীর্ঘদিন ধরেই নানা অপরাধ ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য আলোচনার শীর্ষস্থানে রয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা নেই বললেই চলে। ফলে পুলিশের পক্ষেও স্নেহার শেষ অবস্থান বা গতিবিধি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্নেহার মোবাইল ফোনও তখন থেকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ বলেই খবর। ফোন ট্র্যাক করেও কোনো কার্যকর ফলাফল মেলেনি।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের নজরে আসে বিষয়টি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পোস্ট করে জানান, তিনি এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গিয়েছে এরপর দিল্লি পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) যৌথভাবে ৯ জুলাই থেকে সিগনেচার ব্রিজের আশেপাশের সাত কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। যদিও এই অভিযান থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্নেহার পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, তিনি বেরনোর সময় কোনো ব্যাগ, মোবাইল চার্জার বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নেননি। শুধু তাই নয়, গত চার মাস ধরে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন হয়নি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও কোনো অ্যাক্টিভিটি ছিলনা স্নেহার। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এটি কোনো পরিকল্পিত কোনও পরিকল্পিত চক্রান্ত। একটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করে।
ঘটনার জেরে স্নেহার মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই তাঁরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সাহায্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। সমাজের কাছে একটাই আবেদন তাঁদের, যদি কেউ তাদের মেয়ের সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পান, অনুগ্রহ করে যেন তা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে প্রশ্ন করে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে৷ পুলিশি তৎপরতা সত্ত্বেও তরুণীর কোনো খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে নাগরিক নিরাপত্তা, মহিলাদের নিরাপত্তা এবং আধুনিক শহরের নজরদারি ব্যবস্থার ওপর।
বর্তমানে পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করছে। সিগনেচার ব্রিজ চত্বরে স্থানীয়দের কাছে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ৷ এর পেছনে কাদের চক্রান্ত আছে খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ যত দ্রুত সম্ভব স্নেহাকে খুঁজে পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
