আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাসর রাত—যা এক নবদম্পতির জীবনের সবচেয়ে ঘন মুহূর্তগুলোর একটি। আর সেই রাতেই বরের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক গ্লাস গরম দুধ। এতে থাকে কেশর, পেস্তা, বাদাম বা কখনও হলুদ। নববধূর হাতে এই দুধ পান করানো যেন এক বিশেষ রীতি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই রীতির নেপথ্যে আছে কেবলই সংস্কার, না কি এর রয়েছে সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক বা আয়ুর্বেদিক ভিত্তি?

ভারতীয় উপমহাদেশের বহু প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী, গরুর দুধকে ‘শুভ’ ও ‘পবিত্র’ হিসেবে ধরা হয়। শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় নয়, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও গরুর দুধের রয়েছে সম্মানজনক স্থান। নববধূর প্রথম পদার্পণেও দুধ থাকে এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ—যেমন পায়ে আলতা দিয়ে দুধের থালায় হাঁটা, দুধে অভিষেক ইত্যাদি।

তবে বাসর রাতের দুধ খাওয়ার প্রথাটি নিছক এক রীতি নয়, এর রয়েছে শারীরবিজ্ঞান ও আচারভিত্তিক ব্যাখ্যা। আয়ুর্বেদের ‘অষ্টাঙ্গ সংগ্রহ’ গ্রন্থে ‘ক্ষীর বর্গ’ অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দুধকে ‘বৃশ্য’ অর্থাৎ যৌন ইচ্ছা উদ্দীপক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষত পুরুষ দেহে দুধের উপাদানগুলি শুক্রবৃদ্ধি ও কামশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।

গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফুলশয্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাতে, দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি, মানসিক চাপ ও ক্লান্তির পরে শরীরকে চাঙ্গা রাখার জন্য এই পুষ্টিকর পানীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুধে থাকা ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও, কেশর, বাদাম ও হলুদের মিশ্রণ যৌন হরমোন উদ্দীপনায় সাহায্য করে।

বিশেষ করে, দুধে উপস্থিত ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে সেরেটোনিন ক্ষরণ বাড়ায়, যা ‘হ্যাপি হরমোন’ হিসেবে পরিচিত। এই হরমোন দম্পতির মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং আবেগের ভারসাম্য বজায় রাখে। অপরদিকে, বাদামের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ও জিঙ্ক যৌন ক্ষমতা ও উদ্দীপনায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

শুধু হরমোন নয়, এই দুধে থাকা কেশর এবং হলুদ দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে করে শরীর থাকে প্রশান্ত ও সতেজ। তাই দেখা যাচ্ছে, বাসর রাতে বরের হাতে তুলে দেওয়া সেই এক গ্লাস দুধ কোনো কুসংস্কার নয়। বরং, আয়ুর্বেদিক জ্ঞান, শারীরবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক প্রথার এক আকর্ষণীয় মেলবন্ধন। এ এক গ্লাস দুধ যেন শুধু কামনা নয়, প্রেম, যত্ন আর ঐতিহ্যের প্রতীক—যা যুগ যুগ ধরে রয়ে গেছে আমাদের সমাজের হৃদয়ে।