শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

EXCLUSIVE: ভোটের মধ্যে ধর্মকে টেনে এনেছেন মমতা, তাঁর অনুসারী আরএসএস: দীপ্সিতা

Pallabi Ghosh | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০ : ২৫


বিভাস ভট্টাচার্য: রাজনৈতিক পরিবার ও পরিবেশ থেকে উঠে এসেছেন শ্রীরামপুর লোকসভা নির্বাচনে বাম প্রার্থী সিপিএমের দীপ্সিতা ধর। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বালি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।


* একটা সময় ছিল যখন সিপিএমের মিছিল মানেই সামনের সারিতে শুধু পাকা মাথার লোকেদের ভিড়। আপনার মিছিলে সামনের সারিতে একেবারেই অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীরা। দলে কি তারুণ্যের জোয়ার এসেছে?
দীপ্সিতা: সে তো বটেই। আমার মনে হয় এইমুহূর্তে আমার বয়সী ছেলেমেয়েরা আমাদের দলের রাজনীতি করছেন। সেটা করার কারণ হচ্ছে এখন একটা "ক্রাইসিস" চলছে। পড়াশোনা করেও কেউ চাকরি পাচ্ছে না বা বৃত্তি পাচ্ছে না। একজন গ্র্যাজুয়েট ছেলে কাজ করছেন একটা পেট্রল পাম্পে। যার পাওয়ার কথা ২০ হাজার টাকা সে হয়ত পাচ্ছে সাত হাজার টাকা। ফলে আমার প্রজন্মের যে ছেলেমেয়েরা আজ ক্রাইসিসে ভুগছেন তাঁরা দেখছেন সমাধানের কথা শুধু বামপন্থীরা বলছেন। তাঁরা একথা বলছেন না আমি তোমাকে ভাতা দেব বা গাড়িতে পেট্রল ভরার টাকা দেব। একটা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের কথা শুধু আমরাই বলছি। সেই জন্যই তাঁরা আমাদের দিকে আসছেন।

* আজকে যারা সিপিএমের হয়ে সভা সমিতিতে মূল বক্তা হিসেবে মাইক ধরছেন তাঁরা প্রায় সকলেই তরুণ-তরুণী। বর্তমান পরিস্থিতিতে দল বাধ্য হয়েছে?
দীপ্সিতা: আমার মনে হয় এই বাধ্য করার বিষয়টি ঠিক নয়। যাঁদের কথা ভেবে এই কথাটা বলছেন সেটা মীনাক্ষী মুখার্জি, শতরূপ ঘোষ বা যদি আমার কথাও হয়, এটাও মাথায় রাখতে হবে যে আমরা কিন্তু যুব নেতা হিসেবে কেউ প্যারাসুটে করে নেমে আসিনি। আমরা সবাই আন্দোলন করেই উঠে এসেছি। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থেকে আজকে এটাই স্বাভাবিক।

* কিন্তু এই স্বাভাবিক বা "ন্যাচারাল প্রসেসটা তো ১০ বছর বা তার আগে দেখা যায়নি। ব্যাপারটা কি এরকম যে মানুষ সিপিএম নেতাদের সেই পুরনো মুখ আর দেখতে চাইছেন না বা তাঁদের কথা শুনতে চাইছেন না?
দীপ্সিতা: না। আমি এই কথায় সহমত পোষণ করি না। তার কারণ, এখনও পর্যন্ত আমার দলের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য মুখটা হল বিমান বসু।

* সেটা তো দলের ভেতরে।
দীপ্সিতা: না। এই যে কে কোথায় প্রার্থী বা জোট সম্পর্কে আমাদের কী সিদ্ধান্ত, সেটা দল যাঁকে দিয়ে বলাচ্ছে, তাঁর নাম বিমান বসু। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। যেহেতু লড়াই, আন্দোলনে আমরা সামনের সারিতে ছিলাম তাই স্বাভাবিকভাবেই দলের কথা বলার জন্যও আমরা সামনের সারিতে আছি। আমার এটা একেবারেই মনে হয় না আমার দল থেকে পরিকল্পনা করে কিছু লোককে পেছনে ঠেলার জন্য কিছু কালো চুলের লোককে এগিয়ে দিয়েছে।

* সম্প্রতি একটা ভিডিওতে দেখছিলাম, বিমান বসু বলছেন তাঁর ক্যাপ্টেনও মীনাক্ষী। এর অর্থ কি ব্যাটনের হাত বদল?
দীপ্সিতা: একটা প্রজন্ম থেকে আরেকটা প্রজন্মের কাছে যাওয়া। এই বিমান বসুদের মতো মানুষের জীবন আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। এই প্রজন্মের যে লড়াই সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। কত বড় মনের মানুষ বিমান বসু! তাঁর হাঁটুর বয়সী একজনকে বলছেন তাঁর ক্যাপ্টেন!এই লোকগুলো আমাদের অভিভাবক ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তাঁরা তাঁদের যৌবনটা দলের জন্য দিয়েছিলেন। এবার আমাদের দায়িত্ব।

* এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
দীপ্সিতা: খুবই।

* সিপিএম বলছে এখন একটা বাইনারি পলিটিক্স চলছে।‌ হয় বিজেপি নয় তৃণমূল। এই ধারণাটা ভাঙার জন্য সিপিএম বা আপনারা কী ভাবছেন?
দীপ্সিতা: এই বাইনারি ধারণা খুব সুচতুরভাবে তৈরি করা হয়েছে। ২০১১ সালের পর থেকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির পরিসর পশ্চিমবঙ্গে তৈরি করা হল। এই ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক পরিচয় নির্ধারিত করাটা পশ্চিমবঙ্গে শুরু করলেন মমতা ব্যানার্জি। রাজবংশী ভোট, মতুয়া ভোট বা মুসলিমদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে বলা তুমি মুসলমান তাই আমাকে ভোট দাও। এটা আরএসএস-এরও রাজনীতি। সবসময় লোককে উদ্বেগের মধ্যে রেখে দেওয়া। ঈদের দিন মুসলিমদের একটা ধর্মীয় মঞ্চকে মমতা রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করলেন। কাল যদি শুভেন্দু অধিকারী দুর্গাপূজার ভাসানে গিয়ে একথা বলেন যে সমস্ত হিন্দুদের আমাদের ভোট দিতে হবে, তখন সেটার বিরুদ্ধে তিনি কী বলবেন? কারণ, তিনিই তো ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার পরিসর তৈরি করে দিয়েছেন। এবার প্রশ্ন হচ্ছে যে এটা কীভাবে ভাঙা হবে। আমরা চাইছি শ্রেণী সাম্যের কথা আরও বেশি করে বলতে। আমরা বলছি আপনি হিন্দু, মুসলমান যেই হোন না কেন বাজারে গিয়ে তো আপনাকেই বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে বা আপনার বাড়ির ছেলেটা বা মেয়েটাই তো চাকরি পাচ্ছে না। যার জন্য সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করছে। আপনার দু:খ, আপনার ইচ্ছায় বা আপনার ভালো থাকায় তো কোনও ধর্ম নেই। তাহলে কেন আপনি এর মধ্যে ধর্মকে আনতে দিচ্ছেন? সমস্ত আন্দোলনেই আমরা মানুষের রুটি, রুজির প্রশ্নটাকে মূল বিষয় হিসেবে তুলে আনছি। হয়তো এটা ভাঙতে আরও সময় লাগবে।‌

* সোমবার ১৫ এপ্রিল সিপিএমের পক্ষ থেকে একটা সাংবাদিক সম্মেলন করা হল। যেখানে যারা ছিলেন তাঁরা সবাই মহিলা এবং মহিলাদের কথাই সেখানে বলা হল। যদি রাস্তায় কোনও লোককে জিজ্ঞেস করা হয় একজন সিপিএম নেতার নাম বলতে তিনি পুরুষ কোনও নেতার নাম বলবেন। জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । কেন একজন নেত্রীর নাম পাশাপাশি উচ্চারিত হয় না? দলে কি মহিলারা এতদিন সেভাবে গুরুত্ব পাননি?
দীপ্সিতা: আমি এটার সঙ্গে একমত না। প্রথমদিকে কম্যুনিস্ট আন্দোলন দেখতে গেলে ইলা মিত্র, কল্পনা দত্ত বা গীতা মুখার্জি-সহ একঝাঁক মহিলার নাম উঠে আসবে। কম্যুনিস্ট পার্টির মুখ বলতে আমরা এঁদেরকেও বুঝতাম। এই মানুষগুলো যে সময় রাজনীতি করেছেন সেই সময় এঁরা অতটাই বড় লিডার যতটা আজকের যাঁরা লিডার। তবে হ্যাঁ, মাঝের সময়টায় নেতৃত্বের জায়গায় মহিলাদের যতটা উঠে আসা দরকার ছিল তা হয়নি। এতগুলো বছর ক্ষমতায় থাকার পর সেই সংখ্যা তো আরও বাড়া উচিত ছিল।‌ এটা যে ইচ্ছা করে করা হয়েছে সেটাও আমি বলব না।‌ আসলে আমাদের মধ্যে একটা "প্রোটোটাইপ" আছে। নেতা কেমন হওয়া উচিত? সেই নেতার প্রোটোটাইপটা পুরুষের সঙ্গে বেশি মেলে। তিনি সাদা ধুতি পরবেন, একটা গিলে করা পাঞ্জাবি পরবেন‌। নেতার একটা ইমেজ আছে। সেই প্রোটোটাইপটা ভাঙা যায়নি।

* আগেরদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আপনারা মহিলাদের আত্মরক্ষা-সহ নানা বিষয়ের কথা বললেন।
দীপ্সিতা: আমরা বাধ্য হয়েছি। এই সন্দেশখালির ঘটনা বা উন্নাও বা হাথরসের ঘটনাগুলো আমাদের মহিলা হিসেবে বাধ্য করেছে। আমরা একটা "ইনস্টিটিউশনাল মেকানিজম"-এর কথা বলেছি। এমন নয় যে এগুলো আমরা প্রথম বলছি‌। যা যা ওখানে লেখা আছে সেই জিনিসগুলো নিয়ে কিন্তু লড়াই বা আন্দোলনে আমরা বরাবর ছিলাম।

* ২০১৪তে সিপিএম শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। ২০১৯য়ে তৃতীয় স্থানে চলে গেল। বিজেপি উঠে এল দ্বিতীয় স্থানে। এই বছর সিপিএম বা দীপ্সিতার কাছে এমন কী অস্ত্র আছে যেটার সাহায্যে দীপ্সিতা তৃণমূলের প্রার্থী কল্যাণ ব্যানার্জিকে টপকে যাবেন? কেন লোকে দীপ্সিতাকে ভোট দেবেন?
দীপ্সিতা: দীপ্সিতার কাছে কোনও অস্ত্র নেই। ২০২১ সালের পর যে নির্বাচনটা হয়েছে সেটা পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই পঞ্চায়েত বা পুরসভা নির্বাচনের যদি হিসাবটা দেখা যায়, বেশিরেভাগ জায়গায় আমরা ১ বা ২ নম্বরে। বিজেপি তিন নম্বরে চলে এসেছে। যে সাথীরা তাঁদের জীবন দিয়ে বুথ বাঁচালেন বা ছাপ্পা রুখলেন বা যেসব মানুষ আমাদের ভোট দিলেন বা ২০২১ সালে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের ওপর ভরসা করলেন, তাঁরাই আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। দ্বিতীয়ত, যে ভোটাররা তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে পছন্দ করেছিলেন, তাঁরা দেখেছেন তৃণমূলের যত লোক জেলে গেছেন তার চেয়ে বেশি লোক বিজেপিতে গেছেন। এই লোকগুলোর একটা বড় অংশ আমাদের দিকে ফিরতে শুরু করেছেন। ২১এও ফিরেছেন, পঞ্চায়েতেও ফিরেছেন এবং আমার বিশ্বাস এই নির্বাচনে পুরোটাই ফিরে আসবে।

* সিপিএম আসন সংখ্যাতে শূন্য। এই মহাশূন্য থেকে বেরিয়ে আসতে আপনারা কী কৌশল ভাবছেন?
দীপ্সিতা: প্রাথমিকভাবে আমাদের কাজ চুরি, ডাকাতি বা ইলেক্টোরাল বন্ডে যেন আমরা শূন্য থেকে একে না পৌঁছই, সেই কাজটা করা। তৃণমূলের ভোটার, বিজেপির ভোটার, আইএসএফ-এর ভোটার, সকলের কাছে গিয়ে বলছি, আপনারা ভোট দেওয়ার আগে ভাববেন আপনার ভবিষ্যৎ কাদের কাছে সুরক্ষিত। যারা চুরি করল, ডাকাতি করল, ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে বিদ্যুতের দাম, ওষুধের দাম বাড়ালো তাদের কাছে নাকি যারা শূন্য হয়ে যাওয়ার পর ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে এত কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি মানুষের সামনে আনল তাদের কাছে? কে আসল জনদরদী? কে আপনার মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়াবে? আমার বিশ্বাস, মানুষ আমাদের কথা বুঝবেন, বিশ্বাস করবেন।




বিশেষ খবর

নানান খবর

Advertise with us

নানান খবর



রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া