ইউনাইটেড কলকাতা -১ রেনবো-০
(জ্যাকব)
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রথযাত্রার ঠিক পরদিনই কলকাতা লিগে অভিযান শুরু করেছিল ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাব। সেদিনও ছিল এক শনিবার। আজ উলটোরথ। এই এক সপ্তাহে ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাব তিনে তিন করল কলকাতা লিগে।
প্রথমে পুলিশ, পরে ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব। আর আজ শনিবার ব্যারাকপুরের বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্টেডিয়ামে রেনবো অ্যাথলেটিক ক্লাবকে মাটি ধরাল ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাব।
রেনবো মানে রামধনু। সাত রঙের সমাহার। সেই সাত রং শুষে নিল ইয়ান ল-র ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাব। উলটে তারাই ছড়িয়ে দিল বে-নী-আ-স-হ-ক-লা রং। টানা তিনটি ম্যাচ জিতে লিগে ছুটছে ইউনাইটেডের অশ্বমেধের ঘোড়া। গ্রুপ বি-তে সবার উপরে এখন ইউনাইটেড কলকাতা। ৩ ম্যাচে তাদের ঝুলিতে ৯ পয়েন্ট।

নেভিল কার্ডাস লিখেছিলেন, স্কোরবোর্ড গাধা। এদিন স্কোরলাইন বলছে ১-০ গোলে জিতেছে ইয়ান ল-র ছেলেরা। কিন্তু তা আরও হৃষ্টপুষ্ট হতেই পারত। প্রথমার্ধের গোড়ার দিকে রাকেশ ধারার পুশ গোললাইন সেভ হল। অমিত টুডুর হেড অফসাইডের অজুহাতে বাতিল হল। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেল অমিত মোটেও অফসাইড পজিশনে ছিলেন না। আরও একবার বিষাক্ত হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। সেই গোলগুলো হলে তিন-চার গোল এদিন হজম করত রেনবো। রেফারির হাত থেকে বর্ষিত হল একাধিক কার্ড। অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে দশ জনে নেমে গেল রেনবো।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচে এক গোল হল। ওই গোলই গড়ে দিল খেলার ফলাফল। ম্যাচের ২৭ মিনিটে গোল করলেন জ্যাকব। ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধেও গোল করেছিলেন এই মিজো যুবক। এদিনও গোল করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্তটি।
তাঁর ভাই খেলেন মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। উচ্চতা বেশ ভাল জ্যাকবের। চেহারার গঠনও চোখে পড়ার মতো। তিনি বল ধরলে তাঁর এক পাশ দিয়ে ঠিকরে বেরলো রাহুল ভেনুর ছায়া। বাঁ পায়ের কাজ দেখাতে দেখাতে উইং দিয়ে তিনি আলো ছড়ালেন। তাঁর ঠিকানা লেখা গড়ানে সেন্টার থেকেই জ্যাকবের গোল।
দেবজিৎ ঘোষ ফুটবলার জীবনে ডাকাবুকো স্বভাবের ছিলেন। তাঁর ছেলেদের মধ্যে সেই মেজাজটা তিনি সঞ্চারিত করেছেন। কিন্তু লিগে ইয়ানের 'ল' চলছে বললেও অত্য়ুক্তি করা হবে না। গতবার লিগের প্রথম ডিভিশনে তারাই চ্যাম্পিয়ন। সেই চ্যাম্পিয়নদের গর্জন চলছে প্রিমিয়ার ডিভিশনেও।
ইস্ট-মোহনের মতো কলকাতার বটবৃক্ষ ক্লাব এখনও ধারাবাহিকতা দেখাতে ব্যর্থ। ইউনাইটেড কলকাতা কিন্তু জয়ের হ্যাটট্রিক করে ফেলল।

প্রথমার্ধে আক্রমণের ফল্গুধারা বইল ইউনাইটেডের। দুটো প্রান্ত থেকে ক্রমাগত সুনামির মতো আক্রমণ ভেসে এলে রেনবোর বক্সে। দ্বিতীয়ার্ধে আবার অন্য ছবি। তরুণ কিন্তু অভিজ্ঞ ইয়ান ল জানতেন দ্বিতীয়ার্ধে মরণ কামড় বসাবে রেনবো। তাই রক্ষণ মজবুত করলেন তিনি। তাঁর ছেলেরাও দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেলেন।
রেনবোর আক্রমণ ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল। অভিজ্ঞ নারায়ণ দাসের নেতৃত্বে ইউনাইটেডের রক্ষণ শুষে নিল সব বিষ। আগ্রাসী ফুটবলের পথে হাঁটল রেনবো। কখনও কখনও ভীষণরকমের শারীরিক ফুটবলের দিকেও ঝুঁকল। ইউনাইটেডের গোলদাতা জ্যাকব চোট পেলেন। তাঁর অনেক আগেই চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন রাকেশ ধারা।
দ্বিতীয়ার্ধে জ্যাকবকে তুলে নিয়ে অভিজ্ঞ জীতেন মুর্মুকে আক্রমণে নামালেন ইয়ান ল। এদিকে গোল করতে মরিয়া রেনবো ইউনাইটেড কলকাতার গোলমুখে ফুটবলারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিল। রক্ষণে লোক বাড়িয়ে সেই সব আক্রমণকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করল ইউনাইটেড। তাদের বারের নীচে অভিজ্ঞতার আলো ছড়ালেন অভিলাষ পাল।

ইয়ান ল বলছিলেন, ''ফুটবল তো দুই অর্ধের খেলা। আমরা জানতাম ওরা দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া হয়ে উঠবে। আমাদের টিমওয়ার্ক সাফল্য এনে দিল। সেই সঙ্গে হোমওয়ার্কও কাজে দিল। আমরা একটা পরিবারের মতো।''
মাঠের ভিতরে সেই পারিবারিক বন্ধনের ছবি বারবার দেখা গেল। রক্ষণ থেকে মাঝমাঠ হয়ে আক্রমণে কোনও সময়েই মনে হয়নি নো নেটওয়ার্ক জোন। শুরু হয়েছে ইউনাইটেডের স্বপ্নের দৌড়। স্বপ্ন দেখছেন ইয়ান। সময় যত এগোবে, ইউনাইটেড কলকাতা আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠবে। তাদের ফুটবল ছড়াবে হাজার ওয়াটের আলো। লিগের বাকি দলগুলো কি শুনতে পাচ্ছে আত্মবিশ্বাসী ইয়ান ও তাঁর ছেলেদের গর্জন?
