কৃশানু মজুমদার: কোথাও লেখা হয়েছে, 'মেসি বিপন্ন'। আবার কোনও কাগজে শিরোনাম হয়েছে, 'ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা।' মেসির দেশের সংবাদপত্রে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এলএম ১০-এর যুবভারতী অধ্যায়কে।
কলকাতায় খেলে যাওয়া দিয়েগো মারাদোনার বন্ধু হর্হে বুরুচাগা আজকাল ডট ইন-কে বলছেন, ''কী লজ্জা, কী লজ্জা।''
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শহর কলকাতায় শুরু হয়েছিল মেসিপক্ষ। রাত জেগেছিল সিটি অফ জয়। কিন্তু শনিবার তিলোত্তমা কার্যত অসন্তোষের নগরীতে পর্যবসিত হয়। মেসিকে দেখতে না পাওয়ায় দর্শকদের অসন্তোষ তীব্র ক্ষোভের আকার নেয়। ফুঁসতে থাকা জনতা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে যুবভারতীর।
সেই ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমও এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।
সোমবার আর্জেন্টিনার বিখ্যাত সাত নম্বর জার্সিধারী বুরুচাগা বলছেন, ''আমি নিউজে দেখেছি পুরো ঘটনা। অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার।''
ছিয়াশির বিশ্বকাপ ফাইনালে নীল-সাদা জার্সিধারীর হয়ে তৃতীয় গোলটি করেছিলেন বরুচাগা। মাঝমাঠ থেকে দিয়েগো মারাদোনা থ্রু বল বাড়িয়েছিলেন। গোলের গন্ধমাখা সেই পাস ধরে বুরুচাগা জার্মানির জালে বল জড়িয়ে দেন। বিশ্বকাপ যায় বুয়েনোস আইরেসে।
সেই বুরুচাগা আজকাল ডট ইনকে বললেন, ''যা যা হয়েছে কলকাতায়, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট করা হয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদপত্রে।''
মারাদোনার প্রাক্তন সতীর্থ কলকাতাতেও খুবই পরিচিত এক নাম। ১৯৮৪-এর নেহরু গোল্ড কাপে কার্লোস বিলার্দোর দলের তিনি ছিলেন সদস্য। সেবার আর্জেন্টিনা রিকার্দো গারেকার দেওয়া একমাত্র গোলে ম্যাচ জেতে। তুল্যমূল্য লড়াই করেছিলেন ভারতের ফুটবলাররা।
চুরাশির নেহরু কাপে ভারত-আর্জেন্টিনা ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠলে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন দেশের প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায়। নীল-সাদা জার্সিধারীদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণেন্দুর পিঠে ছিল ১২ নম্বর জার্সি।
খেলার শেষে ডাকাবুকো রাইট ব্যাকের সঙ্গে জার্সি আদানপ্রদান করেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা নেস্টর ক্লাসেন। সেই জার্সি স্থান পেয়েছে মাদ্রিদের ফুটবল মিউজিয়ামে।
কৃষ্ণেন্দু বলেন, ''বিলার্দো আমার খেলা দেখে বলেছিলেন, ১২ নম্বরকে অন্যভাবে ব্যবহার করলে লাভবান হতো ভারত। সেই পেপার কাটিং এখনও রয়ে গিয়েছে আমার কাছে।'' গর্বের ফুটবল অধ্যায়ের কথা তুলে ধরেন বাটানাগরের প্রাক্তন ফুটবলার।
বুরুচাগা সম্পর্কে কী বলছেন কৃষ্ণেন্দু? ''বুরুচাগা বল ধরলেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। আমরা কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলাম।''
সেই বুরুচাগা যুবভারতী কাণ্ড প্রসঙ্গে বলছেন, ''আমি এখন স্পেনে এসেছি। দেশে আমার পরিচিত যাঁদের সঙ্গেই কথা হচ্ছে, তাঁরা আয়োজকদের নিন্দা করছেন। তাঁদের তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে।''
বরুচাগা ভোলেননি কলকাতাকে। মেসি কলকাতায় পা রাখার আগেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ''মেসি কি ওখানে খেলবে?''
সেই তিনিই সব দেখার পরে বলছেন, ''এতে কলকাতারই সম্মানহানি হল।''
দেশের অন্যান্য প্রান্তে মেসি-ম্যাজিক দেখা গেল। চিরদিনের ফ্রেমে বন্দি হলেন নীল-সাদা জার্সিধারীদের ১০ নম্বর। আর তাঁর কলকাতা সফর ধ্বংসের চিহ্ন রেখে গেল। যা জানার পরে বুরুচাগাও সমালোচনা না করে পারলেন না।
