ভারত-১ (৩) ওমান-১ (২)

 (উদান্ত) (খালিদ ইয়াহমাদি)

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিদেশি কোচরা যা করতে পারেননি এতদিন, খালিদ জামিল প্রথম সুযোগেই তাই করে দেখালেন। জিততে ভুলে যাওয়া, হারের ভুলভুলাইয়ায় পথ হারানো এক দলকে নিয়ে খালিদ জামিল বিদেশের মাটিতে তৃতীয় স্থান দখল করলেন। আটটি দেশের মধ্যে ভারত তৃতীয়। এ-ও তো গর্বেরই বিষয়। ইরান, ওমান, তাজিকিস্তানের মতো দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়লেন ছাংতে, গুরপ্রীতরা। অবশেষে সোমবার ভারতীয় ফুটবলের 'চক দে' বিদশের মাঠে। 

দিনকয়েক পরেই শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। গোটা দেশ বুঁদ হয়ে থাকবে তাতে। তার ঠিক আগে খালিদ জামিল ও তাঁর ছেলেরা কিন্তু অসাধ্য সাধান করে এলেন। হয়তো শুভমান গিলদেরও প্রেরণা জুগিয়ে গেলেন। এই টুর্নামেন্টের শুরুরতে কে ভাবতে পেরেছিলেন, শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়ে তৃতীয় স্থান দখল করবে ভারত! খেলোয়াড় ছাড়া নিয়ে দড়ি টানাটানি ছিল। ছিল খালিদকে নিয়ে প্রশ্নও। কেউ কি ভেবেছিলেন তারকাহীন একটা দলের ভিতরে খালিদ তাঁর মতোই জেদ, লড়াকু মানসিকতা ঢুকিয়ে দিতে পারবেন? ফিফার ক্রম তালিকায় ১৩৩ নম্বরে থাকা এক দেশ হারিয়ে দিল ৭৯ নম্বরের এক দেশকে। এমন কথাও কি কেউ চিন্তা করতে পেরেছিলেন?  

আরও পড়ুন: খালি পেটে মোহনবাগানের হয়ে গোল করেছেন, হিরের দর্পচূর্ণের চাকরিহীন নায়কের আর্তি, 'এই সরকার যদি আমার কথা ভাবে...',

 

ওমান ভারতের থেকে ধারে ও ভারে অনেক শক্তিশালী। তাদের কোচ কার্লোস কিরোজ। যিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর প্রাক্তন হেডস্যর ছিলেন। তিনি ইরানের প্রাক্তন কোচও বটে। কিংবদন্তি কোচের দলের বিরুদ্ধে ভারতের 'মোরিনহো' লড়ে গেলেন বুক চিতিয়ে। ভয়ডরহীন খালিদকে 'ভারতের মোরিনহো' বললে কি অত্যুক্তি করা হবে? 

তাজিক, ইরানের বিরুদ্ধে রক্ষণে লোক বাড়িয়ে খেলার রণনীতি অবলম্বন করেছিলেন খালিদ। চর্চায় উঠে এসেছিল তাঁর 'পার্ক দ্য বাস'-এর থিওরি। মোরিনহোও তো পায়ের জঙ্গল তুলে দিতেন নিজেদের পেনাল্টি বক্সে। প্রতিপক্ষ সেই পায়ের গোলকধাঁধায় পথ হারাত। ওমানের বিরুদ্ধেও খালিদ জামিল প্রায় একই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নেমেছিলেন। রক্ষণ শক্তিশালী করো। তাঁর হাতে গোল করার লোক নেই। সৃষ্টিশীল খেলোয়াড় কম। নেই নেই-এর মধ্যেও খালিদ সফল হলেন।

প্রথমার্ধে মরিয়া  লড়াই করল ভারত। রক্ষণে প্রাচীর তুলে দিলেন আনোয়াররা। বিরতির সময়ে খেলার ফলাফল ছিল গোলশূন্য। ভারত অবশ্য জোড়া গোল করতেই পারত প্রথমার্ধে। আনোয়ারের হেড বাঁচান ওমানের গোলকিপার। ইরফান সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। 

দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে যায় ওমান। ৫৫ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামা খালিদ ইয়াহমাদি চকিতে নেওয়া শটে গোল হজম করেন গুরপ্রীত। ভারত লড়াই চালিয়ে গেলেও ওমানের গোলমুখ খুলতে পারেনি। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির হল ৮০ মিনিটে। লম্বা থ্রো থেকে দানিশ ব্যাক হেড করেন। তা উদান্তের কাছে পৌঁছলে হেডে গোল করেন তিনি। সমতা ফেরায় ভারত। বাকি সময়ে ওমানকে আর বিপজ্জনক হতে দেয়নি ভারত। এক্সট্রা টাইমেও গোল করতে পারেনি কোনও দল। 

টাইব্রেকারে লুকিয়ে ছিল অন্য নাটক! প্রথম দুটো শট থেকে গোল করেন ছাংতে ও রাহুল ভেকে। অন্যদিকে ওমানের দুটো শট থেকেই গোল হয়নি। আনোয়ার তৃতীয় শট নষ্ট করেন। ওমান আবার তৃতীয় শট থেকে ২-১ করে ফেলে। জিতিন ৩-১ করার পরে ওমানের আল ঘাসানি ৩-২ করে যান। উদান্ত উড়িয়ে দেন নিজের শট। শরীর ছুড়ে আল ইয়াহমাদিকে থামান গুরপ্রীত। তার পরেই খালিদ জামিলের হাত শূন্যে। যে খালিদ জামিল 'তুকতাক কোচ'  বলে পরিচিত ছিলেন, সেই তিনি-ই ভারতকে জয়ের রাস্তায় নিয়ে গেলেন। শক্তিশালী ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে তুল্য মূল্য লড়াই করে ভারতকে তৃতীয় স্থান এনে দিলেন। বিদেশি কোচ বনাম দেশীয় কোচের তর্কটা মনে হয় খালিদ একাই থামিয়ে দিলেন। 

আরও পড়ুন: অফিসে সামলে একটু বল পেটানো, সেই ওমানের জতিন্দর, সুফিয়ানদের আদর্শ স্কাই-হার্দিকরাই, জানেন তাঁরা কী বলছেন? ...