আজকাল ওয়েবডেস্ক:নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎই যেন ঢিল পড়ল। সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল দেশের ফুটবলমহলে। সুপার কাপের ঠিক আগে ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপিং কোচ সন্দীপ নন্দী সম্পর্কচ্ছেদ করলেন। গোয়া থেকে তিনি ফিরে আসছেন কলকাতায়। 

আচম্বিতে এই অগ্ন্যুৎপাতের খবরে ময়দানে আলোড়ন তৈরি হয়েছে বইকী! কেন সন্দীপ নন্দী ছাড়লেন দায়িত্ব? কেন? কেন?

আরও পড়ুন: ‘অ্যাডাম জাম্পা বলছি, বুমরার ফোন নম্বরটা দেবে?’, প্রতারকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস করলেন অশ্বিন

সেই মাঠের বাইরের ঘটনার জেরে ইস্টবেঙ্গল খবরে! এই ক্লাব কি থিতু হবে না কখনও? দীর্ঘদিন ধরে সাফল্য নেই ক্লাবে। একাধিক ইনভেস্টর এসেছে আর গিয়েছে। একাধিক কোচ এসেছেন কিন্তু হটসিট ছেড়ে একপ্রকার সরে গিয়েছেন তাঁরা। কখনও তিনি ট্রেভর মর্গ্যান, কখনও আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজ, কখনও কার্লেস কুয়াদ্রাত। তাঁরা কর্তাদের ক্লাবপরিচালন পদ্ধতিতে বিরক্ত ছিলেন।

চলতি বছরও অস্কারকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা চলছে। কখনও প্রাক্তন ফুটবলাররা দলের খেলায় সমালোচনা করছেন, কখনও নির্দিষ্ট একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ক্রমাগত অস্কারকে টার্গেট করে চলেছে। এগুলো কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হচ্ছে? ক্লাবকে যখন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ইমামি ম্যানেজমেন্ট ঠিক সেই সময়ে পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা শুরু হচ্ছে। কোনও এক অশুভ শক্তি কি ইস্টবেঙ্গলকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে?   

অন্যন্যবারের তুলনায় এবারের ইস্টবেঙ্গল দল বেশ শক্তিশালী। দলগঠনের উপরে বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থ খরচ করেছে প্রচুর। দলের পাশে সবসময়ে রয়েছেন ইমামি কর্তারা। থাংবোই সিংটো, বিভাস আগরওয়াল অনেক বুঝেশুনে বিদেশি নির্বাচন করেছেন। সেই খেলোয়াড়রা মাঠে নেমে ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতি সুবিচার করার চেষ্টা করছেন। ইস্টবেঙ্গল ভক্তরাও এবারের দল নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। শিল্ডে হারের পরেও এই ইস্টবেঙ্গল ভয়াল ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সুপার কাপে এমন বিশ্বাস রয়েছে ভক্তদের। 

এই পরিস্থিতিতেই সন্দীপ নন্দী দলের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিলেন। সূত্রের খবর, কোচ অস্কার ব্রুজোঁ দেশের প্রাক্তন গোলকিপারকে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে বলেছিলেন, তিনি তাঁর কাছ সঠিকভাবে পালন করছেন না। আর এটাতেই অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। সর্বসমক্ষে সন্দীপ চিৎকার করে ওঠেন বলেই অভিযোগ। কোচকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করতে শুরু করে দেন। 

সূত্রের খবর, শিল্ড ফাইনালের আগে ইস্টবেঙ্গলের দুই গোলকিপার  প্রভসুখান গিল ও দেবজিৎ মজুমদারকে পেনাল্টি প্র্যাকটিসই করাননি আশিয়ান-জয়ী গোলকিপার। ভিডিও দেখাননি গোলকিপারদের। 

সন্দীপের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ রয়েছে। লাল-হলুদে যোগ দেওয়া ইস্তক সন্দীপ নাকি বঙ্গতনয় দেবজিৎ মজুমদারকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে গিলের মনোবল ভেঙে দিচ্ছিলেন। 

শিল্ড ফাইনালে গিল বেশ ভাল খেলেছেন। ম্যাচের শুরুতেই ম্যাকলারেনের শট বাঁচান। মোহনবাগান তখন গোল করে দিলে চাপে পড়ে যেত ইস্টবেঙ্গল। গিল সেটা করতে দেননি। কামিন্স পেনাল্টি নষ্ট করেন। এক্ষেত্রেও মাইন্ড গেমে জেতেন গিল।  একাধিকবার ইস্টবেঙ্গলকে রক্ষা করেন পঞ্জাবী গোলকিপার। 

১২০ মিনিট পরে খেলার ফলাফল ছিল ১-১। দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। কে বলবে এই ইস্টবেঙ্গলকে গতবারও মোহনবাগান খুব সহজেই হারিয়েছে। উল্টে এবার দৌরাত্ম্য দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। 

পেনাল্টি শুট আউটের ঠিক আগের মুহূর্তে দেবজিৎ মজুমদারকে নামানো হয়। গোটা ম্যাচে দেবজিৎ রিজার্ভ বেঞ্চে বসেছিলেন। গা পর্যন্ত ঘামাননি। সেই তাঁকেই মাঠে পাঠানো হয়। গিলকে তুলে নেওয়ায় অসন্তুষ্ট হন গিল।  

প্রেস কনফারেন্সে অস্কারের দিকে ধেয়ে আসে কটূ প্রশ্ন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় কেন দারুণ খেলা গেলকে আপনি বসিয়ে দেবজিৎকে মাঠে পাঠালেন? অস্কার বিস্তারিত ভাবে সেদিন কিছু বলেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্প্যানিশ কোচকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ''আমি আমার কোচিং স্টাফদের পরামর্শ শুনেছিলাম। ওরা আমাকে দেবজিৎকে নামানো কথা বলেছিল। এখন দেখছি আমার সিদ্ধান্ত ভুলই ছিল।'' দলের হেড কোচ হিসেবে সব দায় নিজের কাঁধে নিয়ে নেন অস্কার।  

সূত্রের খবর, পেনাল্টি শুট আউটের আগের মুহূর্তে  সন্দীপকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন তিনি দেবজিৎকে পেনাল্টি শুট আউটের জন্য মাঠে পাঠাচ্ছেন? 

উত্তরে সন্দীপ বলেছিলেন, ''দেবজিৎ টাইব্রেকার বাঁচিয়ে এটিকে-কে চ্যাম্পিয়ন করেছিল কয়েকবছর আগে।'' সেই কারণে গিলকে বসিয়ে দেবজিৎকে মাঠে পাঠানোর কথা বলেন সন্দীপ। অভিজ্ঞ গোলকিপারের সিদ্ধান্ত মেনে নেন অস্কার। তিনি এসব ক্ষেত্রে সাপোর্ট স্টাফের পরামর্শকেই গুরুত্ব দেন। কিন্তু সন্দীপের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে।  কপাল পোড়ে ইস্টবেঙ্গলের। 

সন্দীপের শিক্ষণ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল দলের অভ্যন্তরেই বলে সূত্রের খবর। গিল একেবারেই সন্দীপের প্র্যাকটিস পছন্দ করতেন না। সূত্র অনুযায়ী,সন্দীপ নিজের কাজ ঠিকমতো করেননি বলে এদিন অস্কার অভিযোগ করতেই বিস্ফোরণ ঘটে। সবার সামনে কোচকে অপদস্থ করেন বাঙালি গোলকিপার। তার পর হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। 

সূত্রের খবর সন্দীপ-অধ্যায় কিন্তু ইস্টবেঙ্গল শিবিরকে একটুও আন্দোলিত করেনি। বরং বড় মঞ্চের জন্য নিজেদের তৈরি করতে প্রস্তুত ইস্টবেঙ্গল শিবির। পাখির চোখ সুপার কাপ। তার পরে আইএসএল। লাল-হলুদ ব্রিগেড নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল। শিল্ডে হার বা সন্দীপের আচম্বিতেই চাকরি ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বিচলিত নয় লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাব।  

ইত্যাবধি বহু প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়েছে লাল-হলুদ। শিল্ডের সময়ে কোচ অস্কারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দলে কেরলের প্লেয়ারের সংখ্যাধিক্য নিয়ে তীব্র চর্চা হয়েছে। দলের অভ্যন্তরের কথা কীভাবে কীভাবে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। বড় ম্যাচের আগে কোচের স্ট্র্যাটেজি পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে য়েত। কীভাবে? কে ফাঁস করত জানা নেই। পরোক্ষ ভাবে ইমামির উপরে চাপ বাড়ানো হত বলেই শোনা যায়। দলের স্ট্র্যাটেজি থেকে শুরু করে দলগঠনের কথা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অন্দরমহলের কথা বাইরে চলে আসত। এসব নিয়ে প্রবল চিন্তা ছিল ম্যানেজমেন্টেরও।  

এবার ইমামি বেশ ভাল দলগঠন করেছে। সেটা দেখাই যাচ্ছে মাঠে। অন্যান্য বার মোহনবাগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ মানেই ইস্টবেঙ্গলের হার ভবিতব্যই ছিল। 

কিন্তু এই মরশুমে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ডুরান্ড ডার্বিতে সবুজ-মেরুনের বিরুদ্ধে আধিপত্য বজায় রেখে জিতেছে ইস্টবেঙ্গল। শিল্ড ফাইনালেও বেশ দাপট দেখিয়েছে লাল-হলুদ। যা দেখার পরে ক্লাবের শীর্ষকর্তাও স্বীকার করে নিয়েছেন, ''মস্তানি দেখাতে শুরু করে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।''  

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ক্লাব। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই সম্পূর্ণ অন্য কারণে ইস্টবেঙ্গল শিরোনামে। সামনেই সুপার কাপ। সব ভুলে ইস্টবেঙ্গল মাঠে নামতে বদ্ধপরিকর। 

আরও পড়ুন: উপত্যকার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, সেই রসুল নিলেন অবসর ...