আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিমান চলাচলের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল যে ঘটনাটি তার সূত্রপাত হয়েছিল জলদস্যুদের দ্বারা। একটি সমুদ্র বিমান দখলের মধ্য দিয়ে। আসুন দেখে নেওয়া যাক হংকংয়ের মেইল কোন ঘটনাতে ‘বিমান চলাচলের ইতিহাসে অতুলনীয়’ বলে বর্ণনা করে।

সেই সময় বিমানগুলি কেবল ধনীরা ব্যবহার করতেন। ম্যাকাও এবং হংকংয়ের মধ্যে একটি ছোট বিমানের হঠাৎ বিধ্বস্ত হওয়া এবং একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির বিভিন্ন গল্প বলা এবং সন্দেহজনক আচরণ করার ফলে কর্তৃপক্ষ আসলে কী ঘটেছিল তা আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে বাধ্য হয়।

১৯৪৮ সালের ১৬ জুলাই, ‘মিস ম্যাকাও’ বিমানটি ২৭ জন যাত্রী নিয়ে ম্যাকাও থেকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে চার জনের হংকং যাওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না। বেঁচে যাওয়া ২৪ বছর বয়সী ধান চাষী ওং ইউ তাঁর তিন সহকর্মীর সঙ্গে সবকিছু বিক্রি করে বিমানের টিকিট কিনেছিলেন এবং পাইলটের কাছ থেকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন বিমান চালানো শিখেছিলেন কারণ তাঁরা ভেবেছিলেন অপরাধ থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাঁদের ধনী করে তুলতে পারে।

ইতিহাসবিদদের মতে, পাইলটদের বশীভূত করার পর প্রধান ছিনতাইকারী বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। ছিনতাইকারীরা আশা করেননি যে পাইলটরা প্রতিরোধ করবেন। যার ফলে তাঁরা উভয়কেই গুলি করেন। সেই ক্যাপ্টেনের দেহ বিমানের জয়স্টিকের উপর পড়ে এবং বিমানটি দক্ষিণ চীন সাগরে পড়ে যায়।

Why is flying like swimming with sharks? | by Paul Abela, MSc | Medium

বিমানের ধ্বংসাবশেষ প্রমাণ করেছিল যে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি যা বলেছিলেন তা সবই মিথ্যে ছিল। কিন্তু ওং-এর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা দেখার পর পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বরং রোগীর সেজে গোপনে পুলিশ ওং-এর সঙ্গে বন্ধুত্ব পেতেছিল। পরে সে  তাঁদের কাছে সবকিছু স্বীকার করেছিল।

সে স্বীকার করেছিল যে পরিকল্পনা ছিল বিমানটির দখল নেওয়া, মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করা এবং মুক্তিপণের জন্য লোকদের আটকে রাখা, মৃত্যু পরিকল্পনার অংশ ছিল না। 'বিমান জলদস্যুরা' তাঁদের মোজায় বন্দুক লুকিয়ে রেখেছিল। সেই সময়ে নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: দেশভাগ আটকাতে দুই নেতা বৈঠক করেছিলেন বাথরুমে, বাংলাদেশ তৈরির আগে কী কী ঘটেছিল পাকিস্তানে?

এই ঘটনার পর সংবাদপত্রে ঝড় ওঠে। মানুষের মনে নানা ধারণা আসতে শুরু করে এবং বিমান হাইজ্যাক করা অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা হয়ে ওঠে। বিমান শিল্পের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এটি চুরি এবং মুক্তিপণ থেকে শুরু হয়েছিল এবং এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যেখানে ছিনতাইকারীরা রাজনৈতিক কারণে মানুষ হত্যা করত এবং বিমান ধ্বংস করতেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত, বিমান সংস্থাগুলি 'ছিনতাইয়ের স্বর্ণযুগের' মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় প্রতি সাড়ে পাঁচ দিনে একটি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। প্রতি যাত্রীর জন্য শিল্পের ২১৯,২২১ ডলার ক্ষতি হয়েছিল।

এই বেপরোয়া আচরণের ফলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দরগুলিকে ক্ষুদ্র পুলিশ রাজ্যে পরিণত করা হয়েছিল এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এর পরেই ছিনতাইয়ের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এতটাই যে আজকাল বিমান ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা খুবই নগণ্য।