আজকাল ওয়েবডেস্ক: টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তাঁর বুকে চারটি গুলির ক্ষতচিহ্ন মিলিছে। কিন্তু এফআইআর-এ দাবি করা হয়েছিল, তাঁকে পিছন থেকে তিনটি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সরকারি হাসপাতাল বোর্ডের সদস্য এবং সার্জন ডাঃ দীপক মাথুর জানিয়েছেন, রাধিকাকে চারটি গুলি করা হয়েছে। সবকটি গুলির ক্ষত তাঁর বুকে রয়েছে। ডাক্তার জানিয়েছে গুলিগুলি শরীর থেকে বার করে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এখন মূল বিতর্কের বিষয় তাঁর বাবার স্বীকারোক্তি। পুলিশের এফআইআর অনুযায়ী, রাধিকার বাবা অভিযুক্ত দীপক যাদব স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর মেয়েকে পিছন থেকে গুলি করেছিলেন। তবে, ময়নাতদন্তের ফলাফলে দেখা গেছে যে সমস্ত গুলির ক্ষতচিহ্ন শরীরের সামনের দিকে ছিল। এই অসঙ্গতি সন্দেহভাজন ব্যক্তির বর্ণিত ঘটনার ক্রম সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করেছে এবং রাধিকার মৃত্যুর সময় আশেপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

রাধিকা যাদব। গুরুগ্রামের ২৫ বছর বয়সী প্রতিভাময়ী টেনিস খেলোয়াড় কাঁধে চোট পেয়ে, অ্যাকাডেমি খুলেছিলেন। বৃহস্পতিবার বাবার হাতে খুন হতে হয় তাঁকে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জেরায় দীপক স্বীকার করেছেন মেয়েকে খুন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, মেয়ে রাধিকার টেনিস অ্যাকাডেমি খুব ভাল চলছিল। তাতেই নানা কটাক্ষ করতে থাকেন পড়শিরা। অনেকেই বলেন, মেয়ের টাকা ভোগ করছেন বাবা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় দীপক জানান, কাঁধে আঘাত পাওয়ার পর তার মেয়ে একটি অ্যাকাডেমি খোলেন। কিন্তু দীপক গ্রামের অর্থাৎ ওয়াজিরাবাদের লোকজন তাঁকে নানাভাবে উপহাস করতেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মেয়েকে অ্যাকাডেমি বন্ধ করে দিতেও বলেছিলেন। কিন্তু মেয়ে তাতে রাজি হননি কোনওভাবেই। তাঁর দাবি, উপহাস, কটাক্ষে জেরবার হয়েই বেছে নিয়েছেন চরম পদক্ষেপ। 

যদিও, রাধিকার মৃত্যুর পর প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল টেনিস খেলার পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামে রিল বানানোর প্রতি আসক্তি ছিল তাঁর। এদিনও সেই কারণেই রাধিকার সঙ্গে বচসা হয় তাঁর বাবার।এই বিষয়ে আগেও বাবা-মেয়ের বাদানুবাদ হয়েছে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে তেমনটাই। কী বলা হয়েছে তাতে? বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া রাধিকার একটি বিশেষ রিল নিয়ে আপত্তি ছিল তাঁর বাবার। 

আরও পড়ুন: 'রক্তের মধ্যে ভাসছে আদরের ভাইঝি', ঠিক তার আগেই যা শুনেছিলেন কাকা, টেনিস খেলোয়াড়ের মৃত্যুতে বড় সত্যি এল সামনে

জানা যাচ্ছে যে সম্প্রতি রাধিকা যাদবের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে ইনামুল হক নামে এক যুবকের সঙ্গে বাইকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।সূত্রের খবর, ওই ভিডিও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। দীপক যাদব তা মোটেই পছন্দ করেননি। পুলিশের সন্দেহ, বাবা তার মেয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা, রিল তৈরি করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে জনসমক্ষে ভিডিও বানিয়ে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করায় অসন্তুষ্ট ছিলেন।

রাধিকার মৃত্যু প্রসঙ্গে এবার মুখ খুলেছেন তাঁর কাকা। জানিয়েছেন, আচমকা তিনি বিকট গুলির শব্দ শোনেন। রাধিকার মৃত্যু যে বাড়িতে ঘটেছে, ওই বাড়িতে নীচের তলায় থাকতেন তাঁর কাকা কুলদ্বীপ যাদব এবং তাঁর পরিবার। পুলিশি জেরায় তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি আচমকা উপরের তলায় বিকট গুলির শব্দ শুনতে পান। শুনেই আর কাল বিলম্ব না করে দৌড়ে যান উপরের  তলায় যেখানে রাধিকারা থাকতেন। গিয়েই তিনি বীভৎস দৃশ্য দেখেন। দেখেন, রক্তের মধ্যে পড়ে রয়েছেন তাঁর আদরের ভাইঝি। ততক্ষণে সব শেষ। রাধিকার দেহ তিনি রান্নাঘরে পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন সেই মুহূর্তে তিনি দেখেন, তাঁর রিভলভারটি অর্থাৎ বন্দুকটি পড়ে ছিল ড্রয়িংরুমে।

আরও পড়ুন: ‘ভারতের ক্ষতি হয়েছে এমন একটি ছবি দেখাক’, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ অজিত ডোভালের

কুলদ্বীপের ছেলে পীযুষও গুলির শব্দ পেয়েই দোতলায় ছুটে যান। কুলদ্বীপ এবং পীয়ুস মিলেই রাধিকাকে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করে নিয়ে যান নিকটবর্তী হাসপাতালে। পুলিশি জেরায় এসব জানিয়েছেন রাধিকার কাকাই। জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর, চিকিৎসকরা রাধিকাকে মৃত ঘোষণা করেন। কুলদ্বীপ জানিয়েছেন, তাঁর দাদা দীপক, অর্থাৎ রাধিকার বাবার ৩২ বোরের রিভলবারের লাইসেন্স রয়েছে। দীপকই যে গুলি চালিয়েছেন, সেকথাও জানিয়েছেন তিনি। দীপকের এক ছেলেও আছেন, ধীরজ। তবে ঘটনার সময় ধীরজ বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না, ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে।