আজকাল ওয়েবডেস্ক: পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা নিয়ে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত চলছে। ইজরায়েল অঙ্গীকার করেছে যে তারা কোনও অবস্থাতেই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেবে না। এদিকে, আলোচনা চলছে যে কীভাবে ইজরায়েল ৮০-এর দশকে ভারতকে পাকিস্তানের পারমাণবিক ঘাঁটি ধ্বংস করার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং কেন ভারত ইজরায়েলের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল?

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অভিযোগ, তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে 'ঐতিহাসিক ভুল' করেছে। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, "যখন আজ দেশগুলি পারমাণবিক অস্ত্র নিরপেক্ষ করার জন্য কাজ করছে, তখন আটের দশকে ভারতের  নিষ্ক্রিয়তার ফলে কী হতে পারত- এবং কী হয়নি।“ হিমন্ত দাবি করেছেন, আটের দশকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর কাছে "কাহুতায় পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যকলাপের নিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্য ছিল।"

অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ইজরায়েল সেই সময় সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল। গোয়েন্দা তথ্য প্রদান থেকে শুরু করে যৌথ আক্রমণের পরিকল্পনা পর্যন্ত। জামনগর বিমান ঘাঁটিটিকে সম্ভাব্য লঞ্চপ্যাড হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কাহুতায় বিমান হামলার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল। বাস্তবে পরিণত হওয়ার আগেই হুমকি নির্মূল করার ক্ষমতা এবং ঐক্যমত্য ভারতের ছিল। তবুও শেষ মুহূর্তে, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ইন্দিরা গান্ধী দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রাজীব গান্ধী বিদেশি চাপের মুখে পরিকল্পনাটি বাতিল করে দেন, প্রতিরোধের চেয়ে কূটনীতিকে প্রাধান্য দেন।

আটের দশকের গোড়ার দিকে, কাহুতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি গোপনে এগোচ্ছিল। সেই সময়, ইজরায়েল ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছিল কাহুতার পারমাণবিক ঘাঁটিতে যৌথ বিমান হামলা চালানোর। ইজরায়েলের আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানের 'ইসলামিক বোমা' কেবল ভারতের জন্যই নয়, সমগ্র পশ্চিম এশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে যখন কর্নেল গাদ্দাফির মতো নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভাল ছিল। আশঙ্কা ছিল যে এই প্রযুক্তি লিবিয়া বা ইরানের মতো দেশে হস্তান্তরিত হতে পারে। 

পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইজরায়েল চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। ভারতের তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল না কারণ ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর ভারত খুশি ছিল। অ্যাড্রিয়ান লেভি এবং ক্যাথেরিন স্কট-ক্লার্কের 'ডিসেপশন: পাকিস্তান, দ্য ইউএস এবং দ্য গ্লোবাল উইপন্স কনস্পিরেসি' বইতে লেখা হয়েছে যে ইজরায়েল পাকিস্তানের হাতে থাকা পারমাণবিক বোমাকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করেছিল।

অনেকেই মনে করেন যে, ভারত যদি সেই সময় ইজরায়েলের প্রস্তাব মেনে নিত এবং কাহুতা আক্রমণ করত, তাহলে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি হয় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেত অথবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হত।