গোপাল সাহা
আবারও প্রমাণ হল যে, পুলিশের দায়িত্ব শুধু আইনরক্ষা নয়, মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াও। শনিবার ভোর ৪টে নাগাদ দমদম এয়ারপোর্টের বাইরে দু’নম্বর গেটের সামনে এক অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী রইল ভোরের কলকাতা। এদিন ভোরে এয়ারপোর্টের বাইরে রাস্তার ধারে ড্রেনের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন এক বিদেশী যুবক। পরে জানা যায়, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। নাম কওমি ডেজবান। বয়স মাত্র ২৬ বছর।
দ্রুত উদ্যোগ দমদম পুলিশের
স্থানীয়দের চোখে পড়তেই খবর যায় দমদম থানায়। মুহূর্তের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান দমদম থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুমিত সরকার। মানবিকতার নজির গড়ে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত দমদম মিউনিসিপাল হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
যুবকের অবস্থা ও প্রাথমিক তথ্য
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবকের জ্ঞান এখনও পুরোপুরি ফেরেনি। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। পাসপোর্টে দেখা গিয়েছে তিনি মার্কিন নাগরিক এবং সদ্য ভারত সফরে এসেছেন। আশ্চর্যের বিষয়, তাঁর সঙ্গে কোনও লাগেজ, ব্যাগ বা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র মেলেনি। শুধু পাসপোর্টটি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের অনুমান, অবচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে রেখে তাঁর জিনিসপত্র নিয়ে লুট করে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান
পুলিশের ধারণা, ওই যুবককে মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে লুট করা হয়েছে। কেউ হয়তো তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে পানীয়তে কিংবা খাবারে নেশাজাতীয় পদার্থ মিশিয়ে দিয়েছেন। এমনও আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিনি কোনও অ্যাপ ক্যাব চালকের ফাঁদে পড়েছেন। যদিও এই মুহূর্তে সবই অনুমান। তদন্ত সম্পূর্ণ না হলে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের দমদম থানার একটি সূত্র।

মার্কিন দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছে
ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে দমদম থানার পক্ষ থেকে বিষয়টি অবিলম্বে জানানো হয়েছে ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কলকাতা শাখাকে। দূতাবাসের কর্তারা ইতিমধ্যেই যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছেন। তাঁর নিউ ইয়র্কের ঠিকানা যাচাই ও পরিবারকে জানানো হচ্ছে বলে সূত্রে খবর।
পুলিশের মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
দমদম থানার পুলিশ ও সাব-ইন্সপেক্টর সুমিত সরকারের তৎপরতা ও মানবিক উদ্যোগে আজ প্রাণে বাঁচল এক বিদেশি নাগরিক, যা প্রকার দেশের মান রক্ষা করলো পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। স্থানীয়দের পাশাপাশি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষও পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এই দ্রুত পদক্ষেপের জন্য।
কলকাতার উপকণ্ঠে এমন এক নজির আবারও মনে করিয়ে দিল — পুলিশের পোশাকের ভেতরেও থাকে এক মানবিক হৃদয়। দমদম থানার তৎপরতা ও সহমর্মিতা আজ প্রশংসিত শহর জুড়ে — আর তার ফলেই আমেরিকার যুবক ফিরে পেলেন জীবনের নতুন সুযোগ।
