অতীশ সেন: উত্তরবঙ্গের বিজেপির গড়ে উপনির্বাচনে ঘাসফুলের জয়জয়কার। মাদারিহাট এবং সিতাই দুটি আসনেই জয়ী তৃণমূল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শুধু বাকি। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কর্মীরা গণণাকেন্দ্রের বাইরে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন। সিতাই আসনটি তৃণমূলের দখলে থাকলেও রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মাদারিহাট বিধানসভা আসনটিতে জয়ী হল তৃণমূল।

চা-বলয়ের রাজনীতিতে বিজেপির ক্রমশ শক্তিক্ষয়, গোষ্ঠীকোন্দল এবং গত দু'বার বিজেপি বিধায়ক ও সাংসদদের নির্বাচিত করার পরও এলাকায় তেমন কোনও উন্নয়ন না হওয়ার জেরে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া এ বার তৃণমূলের পালে লেগেছে। ১৯৬৯ সাল থেকে মাদারিহাট আসনটি বামশরিক আরএসপির দখলে। রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ায় তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও ২০১১ সালেও এই আসনে আরএসপির কুমারী কুজুর জয়ী হন। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে এই আসনে বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা জয়ী হয়েছিলেন। সম্ভবত এটি রাজ্যের এক মাত্র আসন যেখানে তৃণমূল এত দিন জয়ের মুখ দেখেনি। এ বারের উপনির্বাচনে এই ট্রেন্ড ভেঙে চুরমার করে দিলেন তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। মাদারিহাট আসনের দশম রাউন্ড শেষে গণনায় তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পোর প্রাপ্ত ভোট ৭৯১৮৬। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রাহুল লোহারের প্রাপ্ত ভোট ৫১০১৮। তৃণমূল এগিয়ে ২৮১৬৮ ভোটে। নির্দল প্রার্থী বুদ্ধিমান লামা ৫০৬১ ভোট পেয়ে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। আরএসপি প্রার্থী পদম ওরাওঁ ৩৪১২ ভোট পেয়ে রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। 

মাদারিহাট আসনে ভোট ঘোষণার পর থেকেই বিজেপির জন বার্লা দলের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে বার বার শিরোনামে এসেছিলেন। এরই সাথে চা-বলয়ের শ্রমিক সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়েও বিজেপি শিবিরের অন্দরে চলছিল দ্বন্দ। বিজেপি প্রার্থীর অতীত তাঁকে তাড়া করে ফিরছিল, বারে বারে উঠে আসছিল তারকেশ্বর লোহার প্রসঙ্গ। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় নেতৃত্ব এই সময় মাটি কামড়ে এলাকায় পড়েছিলেন। এরই সাথে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী পরিকল্পনার বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং মাদারিহাটের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষের সমস্যার পাশাপাশি কৃষি এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সুফল ভোটের ফলাফল তৃণমূল পেল বলে মনে করা হচ্ছে।

উত্তরবঙ্গে এই হার প্রসঙ্গে বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা বলেন, "ওয়ান ম্যান আর্মি এখানে দল চালাচ্ছে। অহঙ্কারের জন্যই বিজেপি এখানে হারল। এই অবস্থার যদি পরিবর্তন না হয় তবে জলপাইগুড়িতে বিজেপির ফল আগামীদিনে আরও শোচনীয় হবে।" উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে বার্লা বনাম আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা'র লড়াই সর্বজনবিদিত। কথাটা তিনি মনোজের উদ্দেশ্যে বলছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে বার্লা বলেন, "বুঝে নিন"।

সিতাই-৬ আসনের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া এবং মাদারিহাট-১৪ আসনের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার থেকে জয়ী হওয়ায় এই আসন দু'টিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২ রাউন্ড গণণার শেষে সিতাই উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা রায় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৮৩টি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১,৬৫,২০০টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী দীপক রায় পেয়েছেন ৩৫,২১৭টি ভোট। কোচবিহার বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হলেও সিতাই আসনটি ছিল তৃণমূলেরই দখলে। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে এই আসন থেকে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়া জয়ী হন। তার আগে আসনটি কংগ্রেসের দখলে ছিল। সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়ী হওয়ার পাশাপাশি উপনির্বাচনেও বিপুল ব্যবধানে তৃণমূল সিতাই আসনটিতে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় কোচবিহারে তৃণমূলের ভিত আরও খানিকটা মজবুত হল। বিজেপির গড়ে শক্তি বাড়িয়ে নিল তৃণমূল।