আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই’, কবীর সুমনের গানটি অনেকেরই প্রিয়। বাঙালি এবং চা অবিচ্ছেদ্য। চা ছাড়া একটি দিনও ভাবতে পারে না বাঙালি। চা বাঙালির প্রাণের আরাম। আর চা বললেই মনে পড়ে দার্জিলিং কিংবা আসামের চা। খাবারের শেষ এক কাপ গরম চা পান করা অনেকের কাছে একটি অভ্যাস। শুধু অভ্যাসই নয়, একটি রীতিও। লিকার চা, দুধ চা বা মশলা দিয়ে তৈরি এই আরামদায়ক পানীয়টি দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার শেষ করার জন্য নিখুঁত উপায় বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু আপনি কি জানেন এই প্রিয় অভ্যাসটি উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে?

কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খাওয়ার পরপরই চা পান করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে যখন পুষ্টির কথা আসে। চায়ের কিছু যৌগ কীভাবে হজম প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে বা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন: মোদির সুরক্ষায় নাগাকন্যার দায়িত্ব বিরাট, প্রধানমন্ত্রীর রক্ষাবেষ্ঠনীতে প্রথম মহিলা এসপিজি আদাসো কাপিসাকে চেনেন?

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা ঠিক যে খাবারের পরপরই চা পান করলে কিছু পুষ্টির শোষণ ব্যাহত হতে পারে, বিশেষ করে আয়রন। চায়ে ট্যানিন এবং পলিফেনল নামক যৌগ থাকে, যা শাক সব্জি খাওয়ার পর শরীরের আয়রন শোষণ হ্রাস করতে পারে।

এটি বিশেষ করে সেই সব ব্যক্তিদের জন্য প্রাসঙ্গিক যাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা কম বা যাদের আয়রনের ঘাটতির ঝুঁকি বেশি। যেমন, গর্ভবতী মহিলা, কিশোর-কিশোরী, অথবা যারা নিরামিষাশী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, খাবারের ঠিক পরে চা খাওয়ার অভ্যাসের সঙ্গে অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ বা আয়রন-বর্ধক খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজনীয়।

আরও পড়ুন: আমেরিকা এবং ইইউও ব্যবসা বন্ধ করেনি রাশিয়ার সঙ্গে, ভারতকে ‘অযথা’ নিশানা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকির পাল্টা জবাব কেন্দ্রের

বিভিন্ন ধরণের চায়ে ট্যানিন এবং অন্যান্য জৈব-সক্রিয় যৌগের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই তাদের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে লিকার চা এবং গ্রিন টি-তে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ট্যানিন থাকে যা শরীরে আয়রনের শোষণ কমাতে পারে। মশলা চায়ের মধ্যে প্রায়শই দারুচিনি, আদা এবং লবঙ্গের মতো মশলার লঙ্গে লাল চা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই মশলাগুলি কিছু হজম প্রক্রিয়ায় সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু অনেকাংশ আয়রণ শোষণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।  ক্যামোমাইল বা পেপারমিন্টের মতো ভেষজ চায়ে সাধারণত ট্যানিনের মাত্রা কম থাকে এবং পুষ্টির শোষণে হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে, হজমের উপর তাদের প্রভাব ব্যক্তির সহনশীলতা এবং ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ভেষজের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, খাওয়ার পর কমপক্ষে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করে চা পান করুন। এই সময়সীমার ফলে চায়ের ট্যানিন এবং অন্যান্য যৌগগুলি হস্তক্ষেপ করার আগেই শরীর পুষ্টি শোষণ শুরু করতে পারে। যদি কেউ একান্তই খাবারের সঙ্গে চা খেতে বেশি পছন্দ করেন, তাহলে তাঁরা ভেষজ চায়ের কথা বিবেচনা করে দেখতে পারেন। এর ফলে পুষ্টির শোষণের বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অথবা, খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে পারেন, যা আয়রন শোষণ প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করবে এবং ট্যানিনের কিছু প্রভাবকে কমাতে পারে।