আজকাল ওয়েবডেস্ক: দাম্পত্য থাকলে দাম্পত্য কলহ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কলহ না হলেও নিরস হয়ে যায় সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রী আর আগের মতো কাছাকছি আসেন না। জমতে থাকে না বলা কথা। সংসারের সব কাজই নিজের মতো এগোতে থাকে। অথচ কমে আসে শারীরিক আকর্ষন। এ কী নিছক বয়সবৃদ্ধির খেলা নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও গভীর কারণ?
সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, এর নেপথ্যে থাকতে পারে ঘরের কাজ। গৃহস্থালির কাজে নারীদের অতিরিক্ত বেশি সময় ব্যয় করা দাম্পত্য সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, জানাচ্ছে জার্নাল অব ফ্যামিলি সাইকোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে নারীরা দিনের অধিকাংশ সময় ঘর পরিষ্কার, রান্নাবান্না বা অন্যান্য গৃহস্থালির কাজে ব্যয় করেন, তাঁদের মধ্যে যৌন ঘনিষ্ঠতার প্রতি আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানসিক ক্লান্তি, চাপ এবং দাম্পত্য জীবনে শ্রমের অসম দায়িত্ববণ্টন এর প্রধান কারণ।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
কী বলছে গবেষণা?
বিভিন্ন দেশে বিবাহিত নারীদের উপর চালানো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের কাজ করলে তাঁদের মধ্যে একধরনের মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। এই ক্লান্তি তাঁদের যৌন আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দেয়। সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটানোর আগ্রহ কমে যায়। গবেষকরা আরও উল্লেখ করছেন, অনেক সময় পুরুষ সঙ্গীরা গৃহস্থালির কাজে নিজেদের দায়িত্বকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন না। এর ফলে নারীকে একাই অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হয়, যা দাম্পত্য সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করে।
মনোবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ
সাইকোলজি টুডে-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি মানসিক চাপও যৌন জীবনে প্রভাব ফেলে। সারাদিনের ঘরের কাজের পর অনেক নারীই শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকে অনবরত দুশ্চিন্তা-অপরিষ্কার ঘর, বাচ্চাদের যত্ন, অফিসের দায়িত্ব ইত্যাদি। এই চাকায় পিষ্ট হতে হতে তাঁরা মানসিক শান্তি খুঁজে পান না, ফলে ঘনিষ্ঠতার আগ্রহ ক্রমশ কমতে থাকে।
লিঙ্গ বৈষম্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম্পত্য সম্পর্কে গৃহস্থালির দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ না হলে নারী-পুরুষের সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হয়। অনেক সময় স্ত্রীই বাড়ির সব কাজ করবেন, এটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়, অথচ পুরুষদের অংশগ্রহণ থাকে সীমিত। শ্রমের এই অসম বণ্টন দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কে অসন্তোষ, মানসিক দূরত্ব ও যৌন আগ্রহহীনতার কারণ হতে পারে।
সমাধান কী?
সমস্যার সমাধান একমাত্র খোলামেলা আলোচনাতেই সম্ভব। দাম্পত্য সম্পর্কে দুই সঙ্গীর মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি হওয়া জরুরি। গৃহস্থালির কাজকে শুধুমাত্র নারীর কাজ বলে ধরে নিলে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ে। পরিবর্তে, রান্না থেকে শুরু করে ঘর গোছানো, সব কাজের মধ্যে পুরুষেরও সমান ভূমিকা থাকা উচিত। এছাড়া, সময়মতো বিশ্রাম, মানসিক চাপ কমানো ও পরস্পরের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়াও সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক।
সব মিলিয়ে এখনকার ব্যস্ত জীবনে গৃহস্থালির কাজ কেবল পরিশ্রম বা লিঙ্গবৈষ্যমে আটকে নেই। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। গবেষণায় স্পষ্ট, মানসিক ক্লান্তি আর অসম দায়িত্ববণ্টন শারীরিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীকে সমান ভাবে দায়িত্ব ভাগ করতে হবে।
