আয়ুর্বেদে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মেথি একটি ঔষধি উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রান্নাঘর থেকে শুরু করে নানা ঘরোয়া প্রতিকার—সবেতেই মেথির ব্যবহার দেখা যায়। মেথি দানায় থাকে ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদান, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তবে মনে রাখতে হবে, অধিকাংশ মানুষের জন্য মেথি জল উপকারী হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে এটি যুক্ত করার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা এবং রোগ-ইতিহাস বিবেচনা করা জরুরি। কিছু নির্দিষ্ট অসুখে আক্রান্তদের জন্য মেথি জল উপকারের বদলে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা সাবধান
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মেথি দানা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সেই কারণেই অনেক ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত মেথি জল পান করেন। তবে যারা ইতিমধ্যেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ মেথি সেই ওষুধের প্রভাব দ্বিগুণ করে দিতে পারে। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা অতি কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ
গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে। মেথি দানায় থাকা কিছু ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান জরায়ু উত্তেজিত করতে পারে, ফলে অকাল প্রসব বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, গর্ভাবস্থার প্রথম ছ’মাস পর্যন্ত একেবারেই মেথি জল পান করা উচিত নয়।
থাইরয়েড রোগীদের জন্য সতর্কতা
মেথির কিছু উপাদান থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। যারা হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগছেন, তাদের মেথি জল পরিহার করা উচিত। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
অ্যালার্জি থাকা ব্যক্তিরা এড়িয়ে চলুন
যাদের মুগ ডাল, চিনাবাদাম বা সয়াবিনে অ্যালার্জি আছে, তাদের মেথিতেও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ফোলাভাব বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে তখনই মেথি সেবন বন্ধ করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
হজমের সমস্যা থাকলে বিপদ
মেথিতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা সাধারণভাবে হজমে সাহায্য করে। তবে যাদের ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস), অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাসের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি উল্টো ফল দিতে পারে। খালি পেটে মেথি জল খেলে গ্যাস, পেট ফোলা, মোচর দিয়ে ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
সঠিক পরিমাণ সেবনেই লাভ
সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সীমিত পরিমাণে মেথি জল উপকারী। এক চামচ মেথি দানা রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল খালি পেটে পান করলে শরীর ডিটক্স হয়, মেটাবলিজম ভাল থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে মনে রাখবেন — প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছুই ভাল নয়। প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে তিন-চার দিন মেথি জল পান করাই সবচেয়ে উপযুক্ত।
