আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঢাকের বোলে বিদায়ের সুর, আকাশে-বাতাসে বিষণ্ণতার ছোঁয়া। মা দুর্গা কৈলাসে ফিরছেন। কিন্তু এই বিষাদের মধ্যেই বাঙালির প্রাণের উৎসব শেষ হয় বিজয়া দশমীর এক অনাবিল আনন্দে- সিঁদুর খেলায়। বিবাহিত মহিলারা একে অপরের মুখে সিঁদুরের লাল রঙ মাখিয়ে দেন, দীর্ঘায়ু কামনা করেন, মিষ্টিমুখ করেন। এই আবেগঘন মুহূর্তের আনন্দকে অনেক সময়েই ছাপিয়ে যায় ত্বকের চিন্তা। কারণ, এখনকার সিঁদুরে রাসায়নিকের ব্যবহার নতুন নয়। ফলস্বরূপ, খেলা শেষে চুলকানি, জ্বালা, র‍্যাশ বা অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দেয়।

কিন্তু সামান্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই এই রঙিন উৎসবকে আপনি উপভোগ করতে পারবেন নিশ্চিন্তে। সিঁদুর খেলার আগে ও পরে- এই দুই পর্যায়েই ত্বকের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন।

খেলার আগে সুরক্ষাকবচ

সিঁদুর খেলার জন্য বেরোনোর অন্তত আধ ঘণ্টা আগে ত্বককে তৈরি করে নিতে হবে। একে বলা যেতে পারে ত্বকের বর্ম তৈরি করা।

ময়েশ্চারাইজার: মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি গাঢ় ময়েশ্চারাইজার ভালভাবে মেখে নিন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে তেলের উপর তৈরি ( অয়েল বেসড) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের উপর একটি সুরক্ষার স্তর তৈরি করবে, যা সিঁদুরের রাসায়নিককে সরাসরি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে বাধা দেবে।

অতিরিক্ত সুরক্ষা: ময়েশ্চারাইজারের উপরে একটি স্বচ্ছ প্রাইমার বা নারকেল তেল, আমন্ড অয়েল অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি হালকা করে লাগিয়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে গাল, কপাল এবং থুতনির মতো অংশে, যেখানে সিঁদুর বেশি লাগার সম্ভাবনা থাকে।

সানস্ক্রিন ভুললে চলবে না: দিনের বেলায় বাইরে সিঁদুর খেলা হলে সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করুন। এটি সিঁদুরের রাসায়নিক এবং সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি- দুইয়ের হাত থেকেই ত্বককে বাঁচাবে।

চুলের যত্ন: সিঁদুরের রঙ চুলে বসে গেলে তা তোলা বেশ কঠিন। তাই সিঁথি বরাবর এবং চুলের গোড়ায় ভাল করে তেল বা সিরাম লাগিয়ে নিন। চুল বেঁধে রাখাই বুদ্ধির কাজ।

 

খেলার শেষে বিশেষ পরিচর্যা

উৎসবের আনন্দ শেষ হওয়ার পর ত্বককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে জরুরি। এই পর্যায়ে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না।

সরাসরি জল নয়: প্রথমেই জল দিয়ে মুখ ধোওয়ার ভুল করবেন না। এতে সিঁদুরের রঙ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রথমে একটি তুলোয় নারকেল তেল বা ক্লিনজিং মিল্ক নিয়ে আলতো করে চেপে চেপে রঙ তুলে ফেলুন। অলিভ অয়েলও খুব ভাল কাজ করে।

ঘষাঘষি নৈব নৈব চ: রঙ তোলার জন্য ত্বককে জোরে জোরে ঘষবেন না। এতে ত্বকের উপরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জ্বালা বা র‍্যাশ বেরোতে পারে। ধৈর্য ধরে আলতো হাতে রঙ তুলুন।

কোমল ফেসওয়াশ: তেল দিয়ে রঙ তোলার পর একটি হালকা, সালফেট-মুক্ত এবং কোমল ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন ফেসওয়াশটি যেন ত্বককে শুষ্ক না করে দেয়।

প্রশান্তির ছোঁয়া: মুখ ধোয়ার পর একটি শীতল এবং আরামদায়ক ফেসপ্যাক লাগাতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল, শসার রস বা চন্দনগুঁড়ো ও গোলাপ জল দিয়ে বানানো প্যাক ত্বকের জ্বালাভাব কমাতে সাহায্য করবে।

আর্দ্রতা ফেরান: সবশেষে, একটি ভাল হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ত্বকের পরিচর্যা শেষ করুন। এটি ত্বকের হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনবে এবং তাকে মসৃণ রাখবে।

 

ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এরপরেও ত্বকে অস্বাভাবিক জ্বালা, লাল ভাব বা র‍্যাশ দেখা যায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামান্য প্রস্তুতি আর একটু যত্ন নিলেই বিজয়ার আনন্দ হয়ে উঠবে আরও রঙিন এবং চিন্তামুক্ত। সিঁদুরের লাল ছোঁয়ায় মা-কে বিদায় জানান, আপনার ত্বকও থাকুক সুরক্ষিত ও উজ্জ্বল।