আজকাল ওয়েব ডেস্ক : মহিলাদের যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তার মধ্যে অন্যতম সার্ভাইক্যাল ক্যানসার। অতিরিক্ত সাদাস্রাব, পিরিয়ড বন্ধের পরও রক্তপাত,যৌন মিলনের সময় রক্তপাত,প্রচন্ড কোমরে ও তলপেটে ব্যথা,হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সময়ে জ্বালা করা, ব্যথা হওয়া সারভ্যাইকাল ক্যান্সারের প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষণ।

এই ক্যান্সার প্রতিহত করতে টিকা আছে ঠিকই, তবে সময়ে টিকা নিতে হবে। তবেই এই ক্যান্সারকে প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ প্রতিহত করা সম্ভব। এই ব্যাপারে সঠিকভাবে জানেন তার সংখ্যা হাতেগোনা।এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি রোগী মারা গিয়েছেন এই ক্যান্সারে। টিকা থাকা সত্ত্বেও কেন এই পরিণতি? 

আসলে টিকা তো নিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এর সঠিক সময়, বয়স সবকিছুর ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট ধারণা আছে কজনের ? কারোর মতে বিয়ের পর টিকা নিলে বা প্রথম সহবাসের আগে নিলে ভাল কাজ করে।

কারও প্রশ্ন সহবাসের সময় যদি প্রতিরোধক ব্যবহার করা হয়, তাহলেও কি ভ্যাকসিন কার্যকর হয়? ভিন্ন লোকের ভিন্ন মত।সঠিকভাবে জানা থাকলে তবেই কিন্তু ভ্যাকসিন দিয়ে ক্যানসার প্রতিহত সম্ভব।টিকা নিয়ে আপনার ধারণাকে স্পষ্ট হতে হবে।

মূলত হিউম্যান প‌্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি-এর আক্রমণে মেয়েদের শরীরে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার বাসা বাঁধে।যার অন্যতম কারণ অসুরক্ষিত যৌনসঙ্গম। এই ভাইরাস পুরুষাঙ্গ দিয়ে মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে বয়সকালে এই ক্যানসার প্রভাব ফেলে। তাই ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। 

চিকিৎসকের মত অনুযায়ী, সঠিক সময়ে অর্থাৎ ৯ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত বয়সের মধ্যে ভ্যাকসিন নিলে ৮০% পর্যন্ত সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে। তবে ৯ থেকে ২৬ বছরের মধ্যেও এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায়।

বিয়ের আগে অথবা যৌনজীবন শুরুর আগে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।না হলে কার্যক্ষমতা কমে আসে।

মূলত বিয়ে হলে কিংবা বিয়ের আগে যৌন সঙ্গমের সময় কন্ডোম ব্যবহার করা উচিত।এতে সুরক্ষা বজায় থাকে। সঠিক বয়সে অর্থাৎ ২৬ বছরের মধ্যে এই ভ্যাকসিন নিলে তার কার্যকারিতা ভাল হয়। যেহেতু, পুরুষদের মাধ্যমেই মহিলাদের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে, তাই সঙ্গমের সময় কন্ডোমের ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। কারন বয়স বাড়লেও ভ্যাকসিন কার্যকর হয় না। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বয়সের সঙ্গে ততই কমতে থাকে।আমাদের দেশে আইনত ২৬ বছর বয়স পর্যন্তই মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।তবে মনে রাখবেন, প্রতিরোধক ছাড়া যৌন মিলনে অভ্যস্ত থাকলে কিংবা সন্তানের মা হয়ে গেলে তাঁদের কিন্তু ভ্যাকসিন কাজ করে না।

তবে সারভাইক্যাল ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং টেস্ট রয়েছে।'প্যাপস স্মেয়ার টেস্ট’এই রোগ নির্ণয়ের জন্য একমাত্র পরীক্ষা।সব মহিলাদের প্রতি তিন বছরে একবার কিংবা পাঁচ বছরে একবার এই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।২৯ বছর বয়স থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে এই টেস্ট জরুরি। তবে কেউ বাড়তি সচেতনতা চাইলে ছ'মাস অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শে স্ক্রিনিং করাতেই পারেন।

যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা কিন্তু নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকবেন না। স্ক্রিনিং অর্থাৎ ‘প্যাপস স্মেয়ার টেস্ট' কিন্তু তাদেরও প্রয়োজন। ভ্যাকসিন সব সময় প্রাইমারি প্রিভেনশনের মতো। স্ক্রিনিং অসুখের শুরুটা বুঝতে পারার জন্য করা হয়।

গর্ভাবস্থাকালীন এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। যাঁরা ‘ল্যাকটেটিং মাদার’ তাঁরাও এই ভ্যাকসিন থেকে দূরে থাকুন।যাদের অ্যালার্জির সমস্যা কিংবা বন্ধ্যাত্বের সমস্যা রয়েছে তাঁরা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। জ্বর, সর্দি অন্য কোনওরকম শরীর খারাপের সময় এই ভ্যাকসিন নেবেন না।

এই মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পেতে কিছু বিধিনিষেধ আপনাকেও মেনে চলতে হবে।একাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন একেবারেই নয়,যৌন মিলনের সময় অবশ্যই কন্ডোমের ব্যবহার ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মদ্যপান, ধূমপানও বর্জন করুন।