প্রত্যেকের সম্পর্কের রসায়ন আলাদা হয়। কিন্তু অনেকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের ইচ্ছা, ক্লান্তি বা মানসিক অবস্থার কথা ভাবেন না। সঙ্গীর প্রতিটি অনুরোধে ‘হ্যাঁ’ বলে দেন। আর এই অভ্যাস ধীরে ধীরে মানসিক চাপ, আত্মসম্মানহানি এমনকী সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে বলে মনে করেন মনোবিদরা। তাই অপরাধবোধ ছাড়াই সম্পর্কের মধ্যে স্বাস্থ্যকর সীমারেখা তৈরি করা প্রয়োজন। যার জন্য জানতে হবে সঠিক কৌশল।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সম্পর্ক তখনই সুন্দর হয়, যখন দু'জন মানুষ একে অপরের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করেন। কিন্তু যদি সবসময় একসঙ্গে থাকা, সব সিদ্ধান্ত একসঙ্গে নেওয়া, একে অপরের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হয়, তাহলে তা সম্পর্ককে শ্বাসরুদ্ধ করে দিতে পারে। তখনই সম্পর্কে সীমারেখা জরুরি হয়ে পড়ে। তবে সীমারেখা মানে কিন্তু দূরত্ব নয়। এটি হল সেই মানসিক, আবেগগত এবং শারীরিক পরিসর, যা মানুষকে সুস্থ রাখে। যদি এই সীমারেখা না থাকে, তাহলে সম্পর্কের মধ্যে একপক্ষ ক্রমাগত মানসিক চাপে পড়ে যায়, নিজের ইচ্ছা-অনুভূতি চেপে রাখে, আর অন্যজন অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সম্পর্কে সীমারেখা না থাকলে বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন- নিজের মতামত প্রকাশে ভয় লাগে, ক্লান্তি বা মানসিক চাপ থাকা সত্ত্বেও সঙ্গীকে খুশি রাখতে সবসময় রাজি হতে হয়, ধীরে ধীরে মনে ক্ষোভ জমতে থাকে যা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব আনে, কখনও কখনও অপরপক্ষ নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শুরু করে।
অপরাধবোধ ছাড়াই কীভাবে সীমারেখা তৈরি করবেন
*নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দিন। মনে রাখবেন৷ নিজের সময়, শান্তি ও মানসিক শক্তি রক্ষা করা স্বার্থপরতা নয়, এটি আত্মসম্মানের অংশ।
*‘আমি’ দিয়ে বাক্য শুরু করুন। অর্থাৎ কাউকে আঘাত না দিয়ে নিজের অনুভূতি জানান। যেমন, 'আমি এখন একটু সময় চাই' বা 'আমি এটা করতে স্বচ্ছন্দ নই।' এতে অপরপক্ষ প্রতিরোধমূলক নয়, সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া দেন।
*ছোট বিষয় দিয়ে শুরু করুন। সবকিছু একসঙ্গে পরিবর্তন না করে ছোট ছোট সীমারেখা তৈরি করুন। যেমন প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় নির্ধারণ করা ইত্যাদি।

*কখনও ‘না’, কখনও ‘হ্যাঁ’ বললে অন্যজন বিভ্রান্ত হতে পারে। তাই নিজের অবস্থান স্পষ্ট রাখুন, তাহলে সম্পর্ক আরও স্বচ্ছ হবে।
*অপরাধবোধ ছাড়ুন। 'আমি না বললে কি অপরজন কষ্ট পাবে?'-এই চিন্তা ত্যাগ করুন। আপনি অন্যের অনুভূতির জন্য দায়ী নন। নিজের সীমা রক্ষা করলেই সম্পর্ক আরওব ভারসাম্যপূর্ণ হবে।
সুস্থ সম্পর্ক মানে একে অপরকে দমিয়ে রাখা নয়, বরং একে অপরকে জায়গা দেওয়া। তাই 'না' বলা মানে ভালবাসা কমে যাওয়া নয়, বরং নিজের সীমানা রক্ষা করে সম্পর্ককে আরও স্থিতিশীল করা। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ভালবাসা কখনও আপনার আত্মসম্মান বা মানসিক শান্তির বিনিময়ে হওয়া উচিত নয়। তাই পরের বার ‘না’ বলতে ভয় পাবেন না। কারণ নিজের যত্ন নেওয়াই সবচেয়ে বড় ভালোবাসা।
