যে কোনও অসুখই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার জন্য রোগের নির্দিষ্ট লক্ষণ বোঝা জরুরি। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলে তার লক্ষণ বিভিন্ন অঙ্গে ফুটে ওঠে। যেমন মুখেও একাধিক শারীরিক সমস্যার উপসর্গ দেখা যায়। মুখ শুধু খাবার খাওয়া বা কথা বলার অঙ্গ নয়, এটি শরীরের ভেতরের অনেক সমস্যারও ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের ভেতরের ছোটখাটো পরিবর্তন মারাত্মক রোগের সতর্কবার্তা হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দেন না। জানলে অবাক হবে, কিডনি থেকে লিভারের মতো গুরুত্ব রোগের লক্ষণ প্রাথমিক অবস্থাতে মুখেই ফুটে ওঠে। তাই অতি সাধারণ বলে মনে হলেও মুখের পাঁচটি লক্ষণ অবহেলা করা উচিত নয়।
১. মাড়ি থেকে রক্তপাত: অনেকে মাড়ি থেকে রক্তপাতকে ব্রাশের কারণে বা তুচ্ছ সমস্যা বলে মনে করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত মাড়ি রক্তক্ষরণ মাড়ির প্রদাহ বা পেরিওডন্টাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। গবেষণা বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে মাড়িতে প্রদাহ থাকলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই মাড়ি থেকে বারবার রক্ত পড়লে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ বাহুমূলের কালচে দাগ নিয়ে স্লিভলেস পোশাক পরতে লজ্জা? এই কটি ঘরোয়া টোটকাতেই নিমেষে মিলবে স্বস্তি
২. মুখে সাদা দাগ বা না সারা ক্ষত: মুখে যদি কোনও সাদা দাগ বা আলসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে না সারে, তবে এটি মুখগহ্বরের ক্যানসার, ভিটামিনের ঘাটতি বা ইমিউন সিস্টেমের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এমনকী সাধারণ ঘা যদি দীর্ঘদিন ঠিক না হয়, তাহলে পরীক্ষা করা জরুরি।
৩. মুখ শুকিয়ে যাওয়া: মুখ শুকিয়ে যাওয়া অনেকের কাছে সাধারণ মনে হলেও, এটি ডায়াবেটিস বা সিজগ্রেন সিনড্রোমের মতো অটোইমিউন রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষ করে রাতে যদি বারবার জল খেতে হয়, তবে এটিকে হালকাভাবে নেবেন না। নেপথ্যের কারণ জানতে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করান।
৪. জিহ্বা মসৃণ বা অস্বাভাবিক রংঃ স্বাস্থ্যকর জিহ্বা গোলাপি, আর্দ্র এবং খানিকটা খসখসে হয়। কিন্তু যদি জিহ্বা মসৃণ, ফ্যাকাশে বা ব্যথা থাকে তাহলে এটি আয়রন, ভিটামিন বি১২ কিংবা ফোলিক অ্যাসিডের ঘাটতির কারণে হতে পারে। অনেক সময় এর পেছনে রক্তাল্পতাও দায়ী থাকে।
৫. ঠোঁটের কোণে ফাটল: ইনফেকশনের আভাস ঠোঁটের কোণে ফাটল দেখা দিলে অনেকেই তার পিছনে শুষ্কতা রয়েছে বলে মনে করেন। কিন্তু আসলে এটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন, আয়রন বা বি-ভিটামিনের ঘাটতির ইঙ্গিত হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

৬. মুখের ফোলাভাবঃ কিডনির সমস্যা হলে অনেক সময়ে মুখে ফুলে যায়। যার জন্য মুখ স্বাভাবিকের তুলনায় বড় দেখায়। অনেকেই চোখের চারপাশে ফোলাভাবকে ক্লান্তির লক্ষণ ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্ত এটি কিডনি বিকল হওয়ার উপসর্গও হতে পারে। তাই মুখে এই ধরনের ফোলাভাব নজরে এলে অবহেলা করা উচিত নয়।
৭. মহিলাদের মুখের রোম বেড়ে যাওয়াঃ ঠোঁটের উপর, দু’গালে রোমের ঘন রেখা নিয়ে বাইরে বেরতে অস্বস্তিবোধ করেন অনেকেই। মুখের এই অবাঞ্ছিত রোমের কারণ হতে পারে পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। এছাড়াও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং থাইরয়েড রোগের কারণে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলেও এই লক্ষণ দেখা যায়।
এই ধরনের কোনও পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক লক্ষণ মুখে দেখলে অবহেলা করবেন না। সময়মতো সঠিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পারবেন।
