আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার। এটি শুধু শরীর থেকে টক্সিন বার করে দেয় না, হজম প্রক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার কিংবা অ্যালকোহল সেবনের কারণে লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে হজমে গোলমাল, অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা, গ্যাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
বর্তমানে অল্প বয়সেই শরীরে থাবা বসাচ্ছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের মতো অসুখ। চিকিৎসকেদের মতে, প্রত্যেক লিভারেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চর্বি থাকে। সেই চর্বি মাত্রাতিরিক্ত জমে গেলে, তখন তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফ্যাটি লিভারের অসুখ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, মদ্যপান করলেই শুধুমাত্র এই অসুখ হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধারণা একেবারেই সত্যি নয়। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ ভারতীয় নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। আর এই রোগের হাত শরীরে বাসা বাঁধতে পারে লিভার সিরোসিসের মতো মারণ ব্যাধি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত কিছু সাধারণ ফল খেলে লিভারের স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং শরীর প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্স হয়।
১. সাইট্রাস ফলঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সাইট্রাস ফল লিভারের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। এগুলো শরীরে গ্লুটাথাইওন নামের এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট তৈরি করতে সহায়তা করে, যা লিভারের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। নিয়মিত লেবুর জল বা কমলালেবু খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং লিভারের কোষকে ফ্রি র্যাুডিক্যালের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আরও পড়ুনঃ রোজ শুধু এক চামচ চিয়া সিড! শরীরের কী কী লাভ হবে জানলে এখনই কিনতে ছুটবেন
২. আপেলঃ আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন, যা একটি দ্রবণীয় ফাইবার। এটি শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করে বাইরে বার করতে সহায়তা করে। ফলে লিভারের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। সকালে বা বিকেলে একটি আপেল খেলে শুধু হজমই ভাল হয় না, শরীরও ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকে।
৩. পেঁপেঃ পেঁপে-তে রয়েছে পাপাইন ও কাইমোপাপাইন নামের বিশেষ হজম উৎসেচক, যা প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং হজম সহজ করে। একইসঙ্গে এই ফলের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদান লিভারের প্রদাহ কমাতে কার্যকর। নিয়মিত পাকা পেঁপে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পেটের নানা সমস্যাও থেকে মুক্তি মেলে।

৪. কিউইঃ আকারে ছোট হলেও কিউই ফল ভিটামিন সি ভিটামিন ই এবং নানা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর। এগুলো লিভারের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এছাড়া কিউই-র ফাইবার হজমের জন্য উপকারী। যারা নিয়মিত কিউই খান, তাদের হজমতন্ত্র শক্তিশালী হয় এবং লিভারও সুস্থ থাকে।
৫. আঙুরঃ ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে আঙুর কার্যকরী। এই ফলে ফ্ল্যাভনয়েড রয়েছে যা লিভার সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে। লিভার থেকে টক্সিন বার করে দিতে সহায়ক আঙুর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কারও আগে থেকেই লিভার বা হজমজনিত সমস্যা থাকে, তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। লিভার সুস্থ রাখতে অ্যালকোহল, অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি।
