শীত মানেই হানা দেয় ত্বকের হাজারো সমস্যা। টানটান ভাব, ফাটল আর শুষ্কতায় ভোগেন আট থেকে আশি। বাইরে ঠান্ডা হাওয়া, কম আর্দ্রতা-সবমিলিয়ে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ ও নিস্তেজ। এমনকী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও খুব একটা সুফল পাওয়া না। কারণ শুধু বাইরের যত্ন নয়, ত্বকের আদ্রতা ভেতর থেকে ধরে রাখতে চাই সঠিক খাবারও। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার নিয়মিত খেলে শীতের শুষ্কতা থেকে সহজেই ত্বককে রক্ষা করা যায়।

*বাদাম ও বীজ: শীতে বাদাম, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া বীজের মতো খাবারগুলো যেন প্রাকৃতিক স্কিনকেয়ার সাপ্লিমেন্ট। এই ধরনের খাবারে রয়েছে ভিটামিন ই, জিঙ্ক ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের কোষকে পুষ্টি জোগায় এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে এক মুঠো আমন্ড বা দইয়ের সঙ্গে এক চামচ ফ্ল্যাক্সসিড খেলে ত্বকের শুষ্কতা অনেকটাই কমে।

*কমলালেবু ও বেরি: কমলালেবু, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি-এই ফলগুলোতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। এটি ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে, ফলে ত্বক থাকে টানটান ও মসৃণ। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বককে ঠান্ডা ও ধুলোময় পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন একবেলার ফল হিসেবে সাইট্রাস জাতীয় ফল খেলে মুখে আনে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।

আরও পড়ুনঃ আইস ওয়াটার ফেসিয়াল থেকে ফেস টেপিং, সমাজ মাধ্যমে জনপ্রিয় রূপচর্চার হরেক ট্রেন্ড! আদৌ এগুলো নিরাপদ তো?

*অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডোতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। ফলে নিয়মিত এটি খেলে ত্বক থেকে আর্দ্রতা বেরিয়ে যায় না। এতে থাকা ভিটামিন ই ত্বককে মসৃণ করে এবং বার্ধক্যের ছাপ কমায়। স্যালাদ, স্মুদি বা রুটিতে অ্যাভোকাডো স্প্রেড করে খাওয়া শীতকালে ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী।

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ: স্যালমন, ম্যাকারেল, সার্ডিনের মতো চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎকৃষ্ট উৎস। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের শক্তি বজায় রাখে ও প্রদাহ কমায়। নিয়মিত খেলে ত্বক থাকে কোমল ও উজ্জ্বল। যারা মাছ খান না, তারা উদ্ভিজ্জ ভিত্তিক ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।

*গাজর ও মিষ্টি আলু: গাজর ও মিষ্টি আলুতে থাকে বিটাক্যারোটিন যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে রূপ নেয়। এটি ত্বকের কোষ পুনর্জন্মে সাহায্য করে ও রুক্ষতা কমায়। নিয়মিত খেলে ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। শীতের স্যুপ বা রোস্টেড সবজিতে গাজর ও মিষ্টি আলু রাখলে ত্বক পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি।

জলসমৃদ্ধ ফল-সবজি: শীতেও শরীরে জলে ঘাটতি হলে ত্বক শুকিয়ে যায়। তাই সেলারি, কমলালেবু, তরমুজের মতো জলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। এগুলো শরীরে আর্দ্রতা বাড়িয়ে ত্বককে ভিতর থেকে হাইড্রেটেড রাখে।

সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, ব্রকলি, পালং ইত্যাদি শাকসবজিতে আছে ভিটামিন এ, সি ও কে-যা ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক কোষ মেরামত করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। স্যালাদ বা স্মুদিতে এসব শাকসবজি রাখলে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

এছাড়াও শীতকালে ভেতর থেকে ত্বকের যত্ন নিন। পর্যাপ্ত জল পান করুন, ঘুম ঠিক রাখুন, আর পুষ্টিকর খাবার খান। শীতের দিনে খুব গরম জল দিয়ে মুখ না ধুয়ে ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত কফি, চা ও প্রসেসড খাবার খাওয়া কমান।