আমরা প্রায়ই অন্ত্রকে শুধু খাবার হজমের অঙ্গ হিসাবে দেখি, কিন্তু এর ভূমিকা এর চেয়ে অনেক বিস্তৃত। কোটি কোটি জীবাণুর আবাসস্থল আমাদের অন্ত্র নীরবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শক্তি, মানসিক অবস্থা এবং হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। যখন এটি ঠিক থাকে, তখন শরীর হালকা লাগে, স্বাস্থ্যে উন্নতি হয় এবং উদ্যম বেড়ে যায়। কিন্তু ভারসাম্য নষ্ট হলে পেটে ফোলাভাব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি, প্রদাহ, এমনকি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা মানে কোনও একক খাবারের ওপর নির্ভর করা নয়, বরং প্রতিদিন সঠিক পছন্দ করা। নিয়মিতভাবে গোটা শস্য, ফল, শাকসবজি, ডাল, বাদাম (যেমন কাঠবাদাম), বীজ এবং ফারমেন্টেড খাবার খাওয়া অন্ত্রের জীবাণুর বৈচিত্র্য এবং ভারসাম্যকে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে শুধু অন্ত্রই নয়, পুরো শরীরও সুস্থ এবং প্রাণবন্ত থাকে।

অন্ত্রকে প্রায়ই শরীরের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ বলা হয়। এবং এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একটি সুস্থ মাইক্রোবায়োম আমাদের পুষ্টি শোষণকে আরও কার্যকর করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যা সরাসরি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো জীবনধারাজনিত রোগের সঙ্গে যুক্ত। অন্ত্র ভেগাস নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যা মানসিক সুস্থতা এবং মুডকে প্রভাবিত করে। সংক্ষেপে বলা যায়, যখন আপনার অন্ত্র ভাল থাকে, তখন আপনার পুরো শরীরও ভালো থাকে।

আপনার অন্ত্রের যত্ন শুরু হয় প্রতিদিনের খাবার থেকে। ফল, সবজি, গোটা শস্য, ডাল, বাদাম এবং বীজ সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকা শরীরকে ফাইবার এবং উদ্ভিজ্জ উপাদান দেয়, যা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। দই, ইডলি, ডোসার মতো ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ফারমেন্টেড খাবার অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে। অন্য দিকে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং বাড়তি চিনি কমিয়ে দিলে ক্ষতিকর জীবাণুর বিস্তার রোধ করা যায়। এই ধরনের ছোট কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস একটি বৈচিত্র্যময় এবং শক্তিশালী গাট মাইক্রোবায়োম গড়ে তোলে।

গাট-ফ্রেন্ডলি খাবারের মধ্যে বাদাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাদের অনন্য পুষ্টিগুণের জন্য। এতে প্রচুর ফাইবার এবং পলিফেনল থাকে, যা প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এগুলো উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে খাবার জোগায় এবং তাদের বৃদ্ধি বাড়ায়।

গাট হেলথের জন্য কোনও জাদুকরী সমাধান নেই। আসল কৌশল হল এমন নিয়মিত অভ্যাস তৈরি করা যা মাইক্রোবায়োমকে সাপোর্ট করে। বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত জল পান করা, সক্রিয় থাকা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা। এই অভ্যাসের মধ্যে বাদাম একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী পছন্দ। অল্প এক মুঠো বাদামেই প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে, যা আপনার গাট ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপকারী।

দিনের শেষে, গাট হেলথ আসলে সার্বিক সুস্থতার ভিত্তি। সঠিক খাবার যেমন বাদাম দিয়ে এটিকে পুষ্টি জোগালে আমরা শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, ভাল হজম, সুস্থ হৃদয় এবং এমনকি আরও মানসিক প্রশান্তি পাব।