আজকের ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ যেন প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। অফিসের ডেডলাইন সামলানো থেকে শুরু করে ফিরে কী রান্না হবে, সম্পর্কের টানাপোড়েন, বাদ নেই কিছুই। ছোট বা বড়— যে কোনও কারণেই হোক, চাপের প্রভাব শরীর এবং মনের উপর পড়েই। সহজভাবে বলতে গেলে, স্ট্রেস  হল শরীর এবং মনের একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া যখন আমরা কোনও পরিস্থিতিকে কঠিন বা চ্যালেঞ্জ হিসাবে অনুভব করি। তবে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা মানসিক চাপ ধীরে ধীরে শারীরিক অসুস্থতার রূপ নিতে পারে। তাই মানসিক সুস্থতার জন্য স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বা চাপ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অনেক।

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট আকৃতি ভাঞ্জো জানান, “আজকের দ্রুতগতির জীবনে আমাদের মন ক্রমাগত চাপের মধ্যে থাকে। যেমন একটি গাড়ি নিয়মিত সার্ভিস ছাড়া মসৃণভাবে চলতে পারে না, তেমনই আমাদের মনকেও মাঝে মাঝে সচেতনভাবে বিশ্রাম দিতে হয়, যাতে তা আবার নতুনভাবে কাজ করতে পারে।”
তিনি সহজে যে কোনও জায়গায় স্ট্রেস কমানোর পাঁচটি কৌশল শেয়ার করেছেন।

 ৪-৭-৮ শ্বাস-প্রশ্বাস কৌশল
এই অনুশীলনে ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ৭ সেকেন্ড ধরে রাখুন, এবং ৮ সেকেন্ড ধরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। ৩–৫ বার পুনরাবৃত্তি করলে এটি শরীরের রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট সিস্টেম সক্রিয় করে, মন শান্ত করে।

প্রোগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন
একটি নিরিবিলি জায়গায় বসে শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশি টানুন এবং ছেড়ে দিন।
উদাহরণস্বরূপ প্রথমে পায়ের পেশি টানুন, কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর ছেড়ে দিন। এভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে অনুশীলন করুন — এটি শরীর ও মন দুটোই আরাম দেয়।

ডুডলিং 
চিন্তা যদি মাথা থেকে সরাতে না পারেন, তাহলে কিছু আঁকিবুঁকি করুন।
মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে লাইন, ঘূর্ণি, বা প্যাটার্ন আঁকুন। এটি মনকে বর্তমান মুহূর্তে ফিরিয়ে আনে এবং মানসিক চাপ কমায়।

স্কুইজ হাগ 
নিজেকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরুন, ২০–৩০ সেকেন্ড হালকা চাপ দিন।
ধীরে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। চাইলে আস্তে আস্তে দুলে নিতে পারেন।
এতে শরীরে ‘অক্সিটোসিন’ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা প্রশান্তি ও উষ্ণতার অনুভূতি দেয়।

উদ্দেশ্যপূর্ণ হাঁটা
মাত্র ১০ মিনিটের মনোযোগী হয়ে হাঁটা শরীর এবং মনের ভারসাম্য ফেরাতে সাহায্য করে। ধীরে হাঁটুন, পায়ের মাটিতে ছোঁয়ার অনুভূতিতে মন দিন এবং শ্বাসের ছন্দের সঙ্গে হাঁটার তাল মিলিয়ে নিন।

মানসিক চাপ জীবনের অংশ, তবে তার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের হাতে। এই সহজ কৌশলগুলি যদি প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন, তাহলে চাপের মুহূর্তগুলোও আপনি অনেক শান্তভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। একটু সচেতনতা, নীরবতা আর নিজের প্রতি যত্ন, এটাই আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানসিক ভারসাম্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি।