আজকাল ওয়েবডেস্ক: সন্তান বা আত্মীয়স্বজন নয়, নিজের সমস্ত সম্পত্তি তিনি উইল করে দিতে চান কোনও এক অপরিচিতকে। শর্ত একটাই, তাঁর মৃত্যুর পর পোষ্য বিড়ালটির নিঃশর্ত যত্ন নিতে হবে। চিনের গুয়াংডং প্রদেশের ৮২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের এই অদ্ভুত ইচ্ছাকে ঘিরেই এখন তোলপাড় সে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া।
লং নামের ওই বৃদ্ধ তাঁর আদরের পোষ্য ‘জিয়ানবা’-র ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চাইছেন। চিনের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, লং নিঃসন্তান। এক দশক আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একাই থাকেন। এক বর্ষার দিনে তিনি চারটি বিড়ালকে আশ্রয় দেন। বড় বিড়ালটির নাম দেন জিয়ানবা। সঙ্গে ছিল তার তিনটি ছানাও। বর্তমানে জিয়ানবা ছাড়া আর কেউ তাঁর সঙ্গে নেই। তাই নিজের অবর্তমানে পোষ্যটির দেখভালের জন্য উপযুক্ত লোক খুঁজছেন তিনি।
গুয়াংডংয়ের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে লং জানিয়েছেন, যিনি তাঁর বিড়ালের ‘ভাল ভাবে যত্ন’ নিতে রাজি হবেন, তাঁকেই তিনি নিজের ফ্ল্যাট এবং সমস্ত জমানো টাকা দিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অনলাইনে বহু মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এক জন মন্তব্য করেছেন, “যদি কেউ এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে রাজি না হয়, তার কারণ হয় তিনি সত্যিকারের বিড়ালপ্রেমী নন, অথবা বৃদ্ধের প্রস্তাবিত শর্তগুলি খুবই কঠোর।” যদিও চুক্তির শর্তগুলি এখনও জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবুও বিষয়টির আইনি জটিলতা নিয়েও সতর্ক করেছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
এক নেটিজেনের কথায়, “বৃদ্ধ হয়তো তাঁর সম্পত্তি দিয়ে দিতে চাইছেন, কিন্তু যিনি এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন, তাঁকে বৃদ্ধের আত্মীয়দের মামলার মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ, তাঁরা ওই সম্পত্তির উপর নিজেদের অধিকার দাবি করতে পারেন।” প্রসঙ্গত, চীনে ২০২১ সালে চালু হওয়া নতুন নাগরিক আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি দেশের সরকার, কোনও প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে তাঁর সম্পত্তি উইল করে দিয়ে যেতে পারেন।
অবশ্য অনেকেই লং-এর টাকা না নিয়েই বিড়ালটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এক জন লিখেছেন, “আমি বিড়ালটিকে দত্তক নিতে চাই, ওঁর টাকার আমার প্রয়োজন নেই।” অন্য এক জন মহিলা লিখেছেন, “আমি দত্তক নিতে ইচ্ছুক।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, লং-এর উদ্বেগটা বুঝতে পারছেন। তাঁর কথায়, “আমিও একসময় এই একই বিষয় নিয়ে ভেবেছি। আমার বিড়ালকে ভরসা করে কার কাছে রেখে যাব, তা আমি জানি না। তাই দত্তক যিনি নেবেন, তাঁকে টাকা দিয়ে যাওয়াই ভাল। কারণ আমি চাই না আমার বিড়ালটা কারও বোঝা হয়ে উঠুক।”
তবে উল্টো বিপদের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, টাকার লোভে খারাপ লোকেরাও বিড়ালটিকে দত্তক নিতে পারে এবং পরে তার উপর অত্যাচার করতে পারে। চিনে সম্প্রতি এই ধরনের অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। বর্তমানে, সে দেশে পোষ্যদের উপর নির্যাতন রুখতে নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিনে পোষ্যের বাজার বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘২০২৫ চায়না পেট ইন্ডাস্ট্রি হোয়াইট পেপার’ অনুসারে, গত বছর চিনে কুকুর ও বিড়ালের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২.৪ কোটি, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২.১ শতাংশ বেশি। পোষ্য কুকুর ও বিড়ালের বাজারও গত বছর ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা) ছুঁয়েছে।