গ্রহদের সেনাপতি হিসাবে পরিচিত মঙ্গল সম্প্রতি গমন করে নিজের রাশি বৃশ্চিকে প্রবেশ করেছে। মঙ্গলের স্বরাশিতে অবস্থান সাধারণত শুভ বলে মনে করা হয় এবং এতে গঠিত হয় রুচক রাজযোগ। যা শক্তি, সাহস এবং সাফল্যের প্রতীক।তবে এইবার মঙ্গল তৈরি করছে এক অত্যন্ত অশুভ এবং বিধ্বংসী যোগ— অঙ্গারক যোগ।

বৈদিক জ্যোতিষ অনুযায়ী, ভূমিপুত্র মঙ্গল ২৭ অক্টোবর বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে মকর রাশিতে অবস্থানরত রাহুর উপর দৃষ্টি দিচ্ছে। এই অবস্থানেই অঙ্গারক যোগের সৃষ্টি হয়েছে।
জ্যোতিষ মতে, অঙ্গারক যোগকে অত্যন্ত অশুভ ধরা হয়। এটি ধ্বংস, সংঘর্ষ, যুদ্ধকে উস্কে দিতে পারে। মানুষকে রাগী, আক্রমণাত্মক করে তোলে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট করে। মঙ্গল ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃশ্চিক রাশিতে অবস্থান করবে, অর্থাৎ এই সময়কাল জুড়েই অঙ্গারক যোগের প্রভাব থাকবে।
এই যোগ বিশেষত ৩টি রাশির জাতকদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক হতে পারে।

কর্কট রাশি
মঙ্গল এবং রাহুর এই অঙ্গারক যোগ কর্কট রাশির জন্য শুভ নয়। জাতকদের কথা বলায় সংযম রাখতে হবে, কারণ রাগে বলা কথা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকুন, গর্ভবতী মহিলাদের বাড়তি সাবধানতা নেওয়া উচিত। আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কোনও সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে নেবেন না, সব ভাবনাচিন্তা করে তবেই পদক্ষেপ করুন।

মকর রাশি
এই রাশিতেই রাহুর অবস্থান এবং তার উপর মঙ্গলের দৃষ্টি পড়ছে, যা অঙ্গারক যোগ তৈরি করছে। এটি মকর রাশির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে। চিন্তাভাবনায় নেতিবাচকতা আসবে, রাগ ও তিক্ত কথাবার্তা বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। শান্ত এবং সংযতভাবে আচরণ করুন, নাহলে ভুল সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির কারণ হবে। চোট পাওয়া বা অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনাও থাকতে পারে। সন্তানের আচরণ বা সিদ্ধান্তেও দুশ্চিন্তা তৈরি হতে পারে।

কুম্ভ রাশি
কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্যও অঙ্গারক যোগ শুভ নয়। রাগ এবং উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, আইন বা নিয়ম ভাঙা থেকে বিরত থাকুন। অল্প ভুলও বড় বিপদের কারণ হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন, সহকর্মীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি এড়ান। দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য ও আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

অঙ্গারক যোগকে বৈদিক জ্যোতিষে একটি তীব্র এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ সংযোগ হিসেবে ধরা হয়। মঙ্গল ও রাহুর মিলনে সৃষ্টি এই যোগ মানুষকে তাড়াহুড়ো, রাগ ও অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, গ্রহের প্রভাব যেমন সতর্কবার্তা দেয়, তেমনই সচেতন থাকারও সুযোগ করে দেয়।
এই সময়ে ধৈর্য, সংযম ও বাস্তব চিন্তা বজায় রাখাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক কর্মে মনোযোগ দিলে গ্রহের প্রতিকূল প্রভাবও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। শেষ পর্যন্ত, ভাগ্য নয় — নিজের সিদ্ধান্তই জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে।