আজকাল ওয়েবডেস্ক: গলা উঁচু করে গাছের মগডাল থেকে পাতা খাওয়া শান্ত, নিরীহ প্রাণী হিসেবেই পরিচিত জিরাফ। কিন্তু এই সৌম্যকান্তি প্রাণীর প্রেম নিবেদন এবং বংশবিস্তারের পদ্ধতি শুনলে চমকে উঠতে হয়। সঙ্গিনী মিলনের জন্য প্রস্তুত কি না, তা জানতে পুরুষ জিরাফ প্রথমে তার মূত্রের স্বাদ পরখ করে দেখে! অদ্ভুত শোনালেও, এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
বন্যপ্রাণ বিশারদরা জানাচ্ছেন, এটি আসলে একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। স্ত্রী জিরাফ যখন ঋতুমতী হয় এবং তার শরীর গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত থাকে, তখন তার মূত্রে কিছু কিছু বিশেষ ফেরোমোন এবং হরমোনের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। সেই গন্ধ বা স্বাদ পরীক্ষা করেই পুরুষ জিরাফ নিশ্চিত হয়, এখন সঙ্গিনীর সঙ্গে মিলিত হওয়া যাবে কি না। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকেই প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ফ্লেমেন রেসপন্স’।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
প্রক্রিয়াটি শুনতে অবাক লাগলেও, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমে পুরুষ জিরাফটি সঙ্গিনীর কাছাকাছি গিয়ে তার পেছনের অংশে হালকা খোঁচা বা ধাক্কা দিয়ে তাকে মূত্রত্যাগে উৎসাহিত করে। স্ত্রী জিরাফটি সাড়া দিলে, পুরুষটি সেই মূত্র মুখে সংগ্রহ করে। এরপরে পুরুষ জিরাফটি তার উপরের ঠোঁট কুঁচকে, মুখটি সামান্য বিকৃত করে মূত্রের রাসায়নিক উপাদানগুলিকে নিজের মুখের তালুতে থাকা একটি বিশেষ অঙ্গে পৌঁছে দেয়। এই অঙ্গটির নাম ‘ভোমেরোনাসাল অর্গান’ বা ‘জেকবসন'স অর্গান’। এই অঙ্গটি আদতে একটি শক্তিশালী ফেরোমোন ডিটেক্টরের মতো কাজ করে। মূত্রে হরমোন এবং ফেরোমোন এর পরিমাণ যথাযথ থাকলে এই অঙ্গটিই জিরাফের মস্তিষ্ককে ‘সবুজ সঙ্কেত’ পাঠায় এবং জিরাফ দু’টি মিলিত হয়।তবে এমন আচরণ শুধু জিরাফ নয়, অন্য বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যেও দেখা যায়। ঘোড়া, ছাগল, বিড়াল থেকে শুরু করে বাঘের মতো হিংস্র প্রাণীর মধ্যেও সঙ্গীর মূত্র পরীক্ষা করার এই প্রবণতা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে মিলন নিষ্ফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং সফল প্রজননের হার বাড়ে। আসলে, যা আমাদের চোখে অদ্ভুত এবং অস্বস্তিকর, বন্যপ্রাণীদের কাছে তা-ই অস্তিত্ব রক্ষার এক নিখুঁত এবং পরীক্ষিত কৌশল।