আজকাল ওয়েবডেস্ক: সে এক আদিম যুগের কথা। একটা সময় ছিল যখন মানুষ সূর্য ওঠার সঙ্গে ঘুম থেকে উঠত। মাঠে কাজ করত, পশুপালন কিংবা কৃষিকাজ করত, নদীর জলে স্নান করত, গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিত। উন্নতির গুঁতোয় সেসব এখন ইতিহাসের পাতায়। আধুনিক মানুষের কাছে জীবনের অপর নাম ব্যস্ততা। চারপাশের কংক্রিটের জঙ্গল আর একটানা পর্দার সামনে সময় কাটানোর অভ্যাস ধীরে ধীরে মানুষকে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এরই ফলাফল হিসাবে বাড়ছে উদ্বেগ, হতাশা, একাকিত্ব এবং মানসিক রোগ।
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এখন শহরে বসবাস করেন। এদের অনেকেই দিনের পর দিন খোলা হাওয়ার সংস্পর্শে না গিয়েই কাটিয়ে দেন। অথচ, একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রকৃতির সংস্পর্শ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।
সবুজের সান্নিধ্যেই শান্তি
ব্রিটেনের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট কোনও পার্কে, বাগানে বা খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটালে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। একই ধরনের গবেষণা করা হয় জাপানেও। ফলাফল একই। তাই এখন জাপানিরা এমন একটি কাজ করছেন যার নাম ‘শিনরিন-ইয়োকু’ বা ‘ফরেস্ট বাথিং’। সহজ ভাষায় এর অর্থ জঙ্গলের মধ্যে সময় কাটিয়ে মানসিক আরাম ফিরে পাওয়া। প্রকৃতির মাঝে নিয়মিত সময় কাটালে এবং নিয়মিত ঘাসের উপর হাঁটলে রক্তচাপ কমে, মন শান্ত হয়, এমনকি স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
মন খুলে নিঃশ্বাস
শহরের তুলনায় গ্রামের বা পাহাড়ি অঞ্চলের বাতাসে দূষণ অনেক কম। বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে, চিন্তাশক্তি পরিষ্কার হয় এবং বিষণ্ণতা হ্রাস পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস গ্রহণ করলে সেরোটোনিনের মতো ‘ফিল গুড’ হরমোন সক্রিয় হয়, যা মানুষের মুড ভাল রাখতে সাহায্য করে।
প্রযুক্তি থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্নতা
প্রকৃতির কোলে গেলে আমরা অজান্তেই মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশনের মতো স্ক্রিন থেকে দূরে থাকি। এই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়। আমেরিকার একাধিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, নিরবধি ডিজিটাল স্ক্রিনে চোখ রাখলে মানুষ একপ্রকারের ‘সেন্সরি ওভারলোড’-এ ভোগে। সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা একটি কার্যকর উপশম।
মানসিক সংযোগ ও আত্মোপলব্ধি
নদীর ধারে বসে থাকা, গাছের পাতার নড়াচড়া দেখা, পাখির ডাক শোনা, এই সব কিছুই মানুষকে বর্তমান মুহূর্তে টেনে আনে। একে বলা হয় ‘মাইন্ডফুলনেস’। এই অবস্থা একধরনের ধ্যানের মতো। এই মাইন্ডফুলনেস উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা হ্রাস করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতি এনে দেয়। অনেকে বলেন, প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য মানুষকে নিজের অন্তর্জগতের সঙ্গে যুক্ত করে। এই আত্মোপলব্ধিই মানসিক সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।
সবমিলিয়ে, প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটু হাঁটা, পার্কে সময় কাটানো, ছাদে বা বারান্দায় গাছ লাগানো বা সাপ্তাহিক ছুটিতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পাহাড় বা জঙ্গলে যাওয়াই হতে পারে এক সহজ ও কার্যকর মানসিক থেরাপি। প্রকৃতির স্পর্শই হতে পারে আজকের শহুরে মানসিক সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান। মন খারাপ হলে কখনও কখনও এক চিলতে সবুজই হতে পারে শ্রেষ্ঠ মনোচিকিৎসক।
