আজকের দ্রুতগতির জীবনে অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং অ্যাসিড পেপটিক ডিজিজ অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। অনেকেই বুক ও পেটজ্বলা, পেট ফুলে যাওয়ার মতো অস্বস্তিতে ভোগেন। এটি কেবল মাঝে মাঝে হওয়া অম্বল নয়, বরং এটি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সামগ্রিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে।

অনেক ক্ষেত্রে এই সমস্যার সেরা সমাধান ওষুধে নয়, বরং সহজ ও টেকসই জীবনধারা পরিবর্তনে লুকিয়ে আছে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন এনে পেটকে শান্ত রাখা এবং হজমের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

খাবার খাওয়ার সময় মনোযোগ ও ধৈর্য জরুরি

আমরা প্রায়ই শুনি কী খাওয়া উচিত, কিন্তু কীভাবে খাই, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনভাবে খাওয়া বা মাইন্ডফুল ইটিংয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও হজমজনিত অস্বস্তি কমাতে বড় ভূমিকা রাখে।

ভারতের স্পাইনাল ইনজুরিজ সেন্টারের সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ মিশ্র বলেন, “আমরা যখন খুব দ্রুত খাই, তখন অতিরিক্ত বাতাস গিলে ফেলি, যা পেটে চাপ বাড়ায়। প্রতিটি কামড় অন্তত ২০–৩০ বার চিবিয়ে খেলে হজমের এনজাইম কাজ শুরু করতে পারে এবং পেটের কাজ অনেক সহজ হয়।”

খাবারের সময় নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। ভারী খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে শোওয়ার দু'তিন ঘণ্টা আগে। ডা. মিশ্র বলেন, “ভারী খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়লে অ্যাসিড সহজেই খাদ্যনালিতে ফিরে আসে।”

অর্থাৎ দেরি করে রাতের খাবার বা লেট-নাইট স্ন্যাকিং ঘুমের ব্যাঘাত ও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ায়।

জল খাওয়াও সচেতনভাবে করা জরুরি। খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত জল পান করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড পাতলা হয়ে যায় এবং হজম ধীরগতি হয়। সারা দিনে অল্প অল্প করে জল খান এবং বরফ-ঠান্ডা নয়, রুম টেম্পারেচারের জল পান করুন। এতে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।

খাদ্যাভ্যাসে কৌশলগত পরিবর্তন আনুন

রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু কিছু খাবার বাদ দেওয়া নয়, বরং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিবর্তন ও ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রথমেই নিজের ট্রিগার ফুড চিহ্নিত করুন। সাধারণভাবে অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, তৈলাক্ত খাবার, চকোলেট, ক্যাফেইন,  অ্যাসিডিক ফল যেমন কমলা এবং টমেটো সমস্যা বাড়ায়।

ডা. মিশ্রর মতে, “পুরোপুরি পরিহার করা কঠিন, তাই সংযমই মূল কথা।” যেমন, যদি আপনি কফি পছন্দ করেন, দিনে এক কাপ হালকা কফিতে সীমিত রাখুন এবং দ্বিতীয় কাপ এড়িয়ে চলুন।

পাশাপাশি একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও গাট-ফ্রেন্ডলি ডায়েট গ্রহণ করা অত্যন্ত উপকারী। নিচের খাবারগুলো হজমতন্ত্রের জন্য দারুণ উপকারী:

আদা: প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহনাশক ও হজমে সহায়ক।

ওটস: অ্যাসিড শোষণ করে ও ফাইবার দিয়ে পেটকে শান্ত রাখে।

চর্বিহীন প্রোটিন: যেমন মাছ, মুরগি ও ডালজাতীয় খাবার।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: যেমন অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল ও বাদাম।

সেদ্ধ সবজি ও নন-সাইট্রাস ফল: যেমন কলা, তরমুজ ও সেদ্ধ শাকসবজি।

এই খাবারগুলো পেটের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আর প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা খাবার যতটা সম্ভব কমাতে হবে।

শুধু খাবার নয়, জীবনযাপনেও আনুন পরিবর্তন

অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও অ্যাসিড পেপটিক ডিজিজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মানসিক চাপ ও শরীরের ভঙ্গির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

স্ট্রেস ও গাট–ব্রেন কানেকশন

ডা. মিশ্র বলেন, “মানবদেহে পেট ও মস্তিষ্কের মধ্যে একটি গভীর যোগসূত্র আছে। মানসিক চাপ পেটে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে রিফ্লাক্স ও হজমজনিত অস্বস্তি আরও বাড়ায়।”

তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় রাখুন ডিপ ব্রিদিং, যোগব্যায়াম, হালকা স্ট্রেচিং বা হাঁটাহাঁটির জন্য। এগুলো বিলাসিতা নয়, বরং হজমতন্ত্রের সুস্থতার অপরিহার্য অংশ।

সহজ সমাধান: উঁচু বিছানা ও ঢিলেঢালা পোশাক

রাতে যদি রিফ্লাক্স বাড়ে, তাহলে বিছানার মাথার দিকটি ছ'থেকে ন'ইঞ্চি উঁচু করে দিন।

এছাড়া কোমরের চারপাশে টাইট পোশাক পরা এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো পেটে চাপ সৃষ্টি করে অ্যাসিডকে খাদ্যনালিতে ঠেলে দিতে পারে।