আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ, জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার পবিত্র দিনে, পালিত হয় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম শ্রদ্ধেয় এবং প্রাচীন উৎসব এটি। হাজার হাজার ভক্ত এই ঘটনা চাক্ষুষ করতে প্রতিবছর ভিড় জমান ওড়িশার পুরীধামে।
স্নানযাত্রা হল রথযাত্রার সূচনা মুহূর্ত। রীতি অনুযায়ী, আজ সকালে প্রভু জগন্নাথকে দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রা-সহ মন্দিরের রত্নসিংহাসন থেকে বর্ণাঢ্য ‘পহন্ডি বিজয়’ শোভাযাত্রার মাধ্যমে গর্ভগৃহের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের অধিষ্ঠান করানো হয় মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত ‘স্নান মণ্ডপে’। ভক্তদের দর্শন দেওয়ার পর শুরু হয় মূল পর্ব—‘মহা স্নান’। মন্দিরের অভ্যন্তরে থাকা সোনার কুয়ো বা ‘সুবর্ণ কূপ’ থেকে তোলা ১০৮ ঘড়া সুগন্ধি জলে তিন দেবতাকে স্নান করানো হয়।
বিশ্বাস করা হয় যে, এই বিপুল পরিমাণ জলে স্নান করার পর দেবতারা জ্বরে কাবু হন। তাই আজ রাতের পর থেকে শুরু হবে তাঁদের ‘অনসর’ পর্ব। আগামী ১৫ দিন ভগবান সাধারণ ভক্তদের দর্শন দেবেন না। এই সময় তাঁদের ‘অনসর ঘর’-এ রেখে বিশেষ ভেষজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হবে। অনসর পর্ব শেষে, সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমাবস্যার পরের দিন ভগবান ভক্তদের ‘নবযৌবন’ রূপে দর্শন দেবেন, যা ‘নবযৌবন দর্শন’ নামে খ্যাত। এর পরেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিখ্যাত রথযাত্রা।
পুরাণ অনুসারে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রথমবার দারুব্রহ্ম রূপে দেবতাদের প্রতিষ্ঠা করার পর এই স্নানযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। সেই ধারা আজও অটুট। পুরী ছাড়াও ভারতের নানা প্রান্তে এবং বিদেশে, যেখানে যেখানে জগন্নাথদেবের মন্দির রয়েছে, সেখানেই এই দিনে স্নানযাত্রা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়।
বিশ্বাস করা হয়, আজকের দিনে ভগবান জগন্নাথদেবের স্নানদর্শন করলে ভক্তদের পাপমোচন হয় এবং ভবিষ্যতের মঙ্গল সূচিত হয়। ধর্ম আর আস্থার মিলনে, এই স্নানযাত্রা নিছক একটি লোকাচার নয়, এ এক আধ্যাত্মিকতার উদযাপন, ভক্তির অবিচল প্রবাহ।