পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও, ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্ত লাগে? সারাদিন কোনও কারণ ছাড়াই গা ম্যাজম্যাজ করে? ভাল লাগে না কিছুই? এর নেপথ্যে আপনার বাড়ি নেই তো? সম্প্রতি পরিবেশগত সাইকোলজি সংক্রান্ত একটি গবেষণায় কিন্তু তেমনটাই জানানো হয়েছে। ফেং সুই বা বাস্তুশাস্ত্রে বহুদিন আগেই যা বলা হয়েছিল, এক প্রকার তাতেই যেন এই গবেষণা সিলমোহর দিল। কী জানানো হয়েছে এই গবেষণায়? আশেপাশের পরিবেশ, বাড়ির এনার্জি ভীষণ রকম মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। মূলত, যাঁরা প্রায় সারাদিন বাড়িতে থাকেন তাঁদের উপর এই প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। 

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অগোছালো, এলোমেলো জায়গা অজান্তেই আপনার কর্টিসল লেভেল বাড়িয়ে দেয়। এটি এমন এক ধরনের হরমোন যা স্ট্রেসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বাড়ির ছোটখাটো জিনিস যেমন আলো, রং পর্যন্ত স্ট্রেস বাড়াতে পারে, যার কারণে অবসাদ, ঘুম না হওয়া, ক্লান্তি আসে। 

এছাড়া প্রতিটি বাড়ির আলাদা আলাদা এনার্জি থাকে। এটি মূলত সেই বাড়িতে কতটা প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করছে, কোন রং কোন দিকে ব্যবহার করা হয়েছে, কোন আসবাব বা গাছ কোন দিকে রাখা হয়েছে এর উপর নির্ভর করে। নিউরোসায়েন্সের মতে, প্রাকৃতিক আলো অর্থাৎ সূর্যের আলো পর্যাপ্তভাবে ঘরে ঢুকলে সেটা সির্কাডিয়ান রিদম বজায় রাখে। আবার বায়োফিলিক জিনিস, অর্থাৎ ঘরের ভিতরে যে গাছ রাখা যায় সেটা, অ্যাকোয়েরিয়াম রক্তচাপ কমায়। মুড ভাল রাখে। নরম বা হালকা রং ইতিবাচকতা ছড়ায়। ফলে এই ছোট ছোট জিনিসের দিকে নজর দিলে সেটা আখেরে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে। 

তবে বর্তমান সময়ে অনেকেরই ওয়ার্ক ফ্রম হোম থাকে। বাড়ি থেকে তেমন বেরোনো হয় না। তারপর একা হাতে অনেক কাজ সামলানো, ঘরকে অ্যাস্থেটিক লুক দিয়ে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলেন অনেকে। এতে কায়িক এবং মানসিক দুই চাপই বাড়ে। আর্টিফিসিয়াল আলো সারাক্ষণ জ্বেলে রাখলে, ঘর অগোছালো করে রাখলে, ভুল জায়গায় আয়না রাখলে সেটা অজান্তেই শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস বাড়ায়। 

বাড়িতে ইতিবাচকতা বাড়াতে, মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কী করণীয়? 

ঘরে যতটা সম্ভব সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দিন। আর্টিফিসিয়াল আলো সারাক্ষণ না জ্বেলে, প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে দিন সকালে। 

ঘরে গাছ, অ্যাকোয়েরিয়াম, ইত্যাদি রাখুন। 

ঘর অগোছালো, এলোমেলো করে রাখবেন না। যেখানকার জিনিস সেখানে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখুন। 

উদ্ভট, ডিপ রং ব্যবহার করার বদলে হালকা রং ব্যবহার করুন ঘরে। এতে চোখের আরাম হবে। 

ঘিঞ্জি করে একগাদা আসবাব পত্র রাখবেন না। প্রয়োজনীয় জিনিস রাখুন। একটা আলাদা কোণ রাখুন যেখানে বসে যোগব্যায়াম বা ধ্যান করতে পারবেন।