ডিসেম্বর মাসটি পালিত হয় কোষ্ঠকাঠিন্য সচেতনতা মাস হিসাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য শুধু অস্বস্তির বিষয় নয়, বরং এটি শরীরের ভিতরের কোনও সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হওয়া বা খুব শক্ত মল ত্যাগ করাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।

শীতকালে অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে দেখা যায়। অনেক সময় শীতে জল খাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণেই এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে যদি বারবার এমন হতে থাকে, তা হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ডা. অরবিন্দ বাদিগর জানিয়েছেন, শীতকালে কিছু অভ্যাস একত্রে অন্ত্রের স্বাভাবিক গতি কমিয়ে দেয়।

শারীরিক সক্রিয়তা কমে যাওয়া
ঠান্ডার কারণে বাইরে বেরিয়ে হাঁটা-চলা বা শরীরচর্চা কমে যায়। অথচ হাঁটা, দৌড়নো বা নিয়মিত নড়াচড়া অন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং মলত্যাগে সাহায্য করে। শরীর কম নড়াচড়া করলে অন্ত্রে খাবার ও বর্জ্য দীর্ঘক্ষণ থেকে যায়, ফলে অতিরিক্ত জল শোষিত হয়ে মল শক্ত হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম মলত্যাগের হার ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

তৃষ্ণা কম লাগায় জলশূন্যতা
শীতে ঘাম কম হয় এবং তৃষ্ণাও তেমন অনুভূত হয় না। কিন্তু জলশূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম প্রধান কারণ। পর্যাপ্ত জল পান করলে মল নরম থাকে এবং সহজে ত্যাগ করা যায়। জল কম খেলে কোলন বেশি জল শোষণ করে নেয়, ফলে মল শক্ত হয়ে যায়। শীতকালেও দিনে অন্তত ১.৫ থেকে ২ লিটার জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
শীতে সাধারণত বেশি কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া হয়। কাঁচা শাকসবজি ও ফল, যা ফাইবারে সমৃদ্ধ, সেগুলির পরিমাণ কমে যায়। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার মলের ওজন ও জলধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২৫–৩০ গ্রাম ফাইবার না পেলে মলত্যাগে দেরি হতে পারে।

ঋতুভিত্তিক হরমোন ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন
ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের বিপাকক্রিয়া কিছুটা ধীর হয়ে যেতে পারে। শীতকালে বিপাকক্রিয়ার পরিবর্তন হজমতন্ত্রের গতিও কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হয়।

শীতে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে কী করবেন

সক্রিয় থাকুন: ঘরের ভিতরে যোগব্যায়াম, ট্রেডমিলে হাঁটা বা হালকা ওজন তোলার মতো ব্যায়াম করুন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা হজমে সাহায্য করে।

নিয়মিত জল পান করুন: সারা দিনে পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ জরুরি। গরম সবজির স্যুপ ও হার্বাল টি শীতে ভাল বিকল্প।

ফাইবারের দিকে নজর দিন: গোটা শস্য, ডাল, মৌসুমি ফল ও সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।

সচেতনভাবে খান: অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার ও তরল রাখুন।

শীতকালে একটু সচেতন থাকলেই কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।