ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার বাছাই করতে সবসময়ই একটু বেশি সাবধান হতে হয়। বিশেষ করে আলু, ভাত বা মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে অনেকের মনে ভয় থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি আলু খাওয়া কি নিরাপদ? পুষ্টিবিদদের মতে, ঠিকভাবে খেলে মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়।
এব্যাপারে জানার আগে প্রথমে বুঝে নেওয়া দরকার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই কী। জিআই হল ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত একটি স্কেল, যা জানায় কোনও খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করা কত দ্রুত বাড়ে। জিআই ৫৫ বা তার কম হলে তাকে কম জিআই ধরা হয়। ৫৬–৬৯ হলে মাঝারি জিআই। ৭০ বা তার বেশি হলে বেশি জিআই।ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম বা মাঝারি জিআই খাবার তুলনামূলকভাবে ভাল।
মিষ্টি আলুর জিআই রান্নার ধরন অনুযায়ী বদলে যায়। সেদ্ধ বা হালকা বেক করা মিষ্টি আলুর জিআই সাধারণত ৪৪ থেকে ৬১-এর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ এটি কম থেকে মাঝারি জিআই-র খাবার। তাই ঠিকভাবে রান্না করলে মিষ্টি আলু খেলে রক্তে শর্করা হঠাৎ খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তবে বেশি সময় ধরে সিদ্ধ করা, ভাজা বা মিষ্টি দিয়ে রান্না করলে জিআই বেড়ে যেতে পারে।
পুষ্টিগুণের দিক থেকেও মিষ্টি আলু বেশ উপকারী। এতে রয়েছে ফাইবার, যা হজম ধীরে করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা চোখ, ত্বক, হৃদযন্ত্র এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ভাল। সাধারণ সাদা আলুর তুলনায় মিষ্টি আলু অনেক সময়েই বেশি স্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিমাণ। ডায়াবেটিস রোগীরা একবারে বেশি মিষ্টি আলু খাবেন না। মাঝারি আকারের একটি মিষ্টি আলু বা আধা থেকে এক কাপ সেদ্ধ মিষ্টি আলু যথেষ্ট। যদি মিষ্টি আলুর সঙ্গে ডাল, মাছ, ডিম বা প্রচুর সবজি রাখা যায়, তাহলে রক্তে শর্করার প্রভাব আরও কম হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ডায়াবেটিস থাকলেও মিষ্টি আলু পুরোপুরি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সঠিক রান্না, কম পরিমাণ এবং সুষম খাবারের অংশ হিসেবে খেলে এটি নিরাপদ ও পুষ্টিকর হতে পারে। তবে যাঁদের সুগার খুব ওঠানামা করে, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
