আজকাল ওয়েবডেস্ক: আপনি যদি কখনও কোনও শিব মন্দিরের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে সম্ভবত আপনার সামনেই দৃশ্যটি ঘটতে দেখেছেন। ভক্তরা প্রথমে নন্দীর দিকে ঝুঁকে পড়েন, তার কানের কাছে হাত দিয়ে কিছু একটা ফিসফিস করে বলেন এবং তারপর ভগবান শিবের পুজো করতে যান। এই আচারটি সম্পর্কে কাউকে কিছু শিখিয়ে দিতে হয় না, কিন্তু এটি চলতেই থাকে। সকলে কেন এমন করেন?

নন্দী শুধু ভগবান শিবের বাহনই নয় 

নন্দী নন্দিকেশ্বর বা নন্দীদেব নামেও পরিচিত। হিন্দু দেবতা শিবের বাহন ষাঁড়।  কৈলাসের রক্ষক দেবতাও বটে। নন্দীকে শিব মন্দিরে কেবল সজ্জা বা প্রতীক হিসেবে রাখা হয় না। এটি শিবের নিকটতম সঙ্গী এবং সর্বদা গর্ভগৃহের দিকে মুখ করে বসে থাকে। তার দৃষ্টি থাকে ভগবান শিবের মূর্তির উপর নিবদ্ধ। অনেক রীতিতে তাকে দ্বাররক্ষক হিসেবে দেখা হয়। নন্দী শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকেই শিবের সবচেয়ে কাছে থাকে। প্রথমে নন্দীর সঙ্গে কথা বলাটা সেই ঘনিষ্ঠতাকে স্বীকার করে নেওয়ারই একটি উপায়।

ভক্তরা কেন নন্দীর কানে ফিসফিস করে কথা বলেন?

এই রীতিটি নীরবে পালন করার একটি কারণ আছে। ফিসফিস করে কথা বললে আপনি ধীর হতে বাধ্য হন। আপনি এটি অন্যদের জন্য করেন না। আপনি আপনার ইচ্ছে ঘোষণা করেন না। এটি নন্দী এবং আপনার মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করার মতো প্রায় গোপনীয় বিষয়ে পরিণত হয়। অনেক ভক্ত বিশ্বাস করেন যে, যা মৃদুস্বরে বলা হয়, তার মধ্যে আন্তরিকতা থাকে। এই কাজটি দেখায় যে, প্রার্থনার অর্থবহ হওয়ার জন্য উচ্চস্বর বা আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই।

নন্দী কোনও ভক্তের প্রার্থনা ভুলে যায় না

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নন্দী একজন চিরন্তন শ্রোতা। বলা হয় যে তার কানে বলা প্রতিটি ইচ্ছা মনে রাখে সে এবং নিশ্চিত করেন যে ভক্তের আন্তরিক প্রার্থনা সঠিক সময়ে ভগবান শিবের কাছে পৌঁছয়। এই কারণেই ভক্তরা প্রায়শই তাদের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাগুলি নন্দীর কানে ফিসফিস করে বলেন। সকলেরই বিশ্বাসে যে নন্দী বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে, সে কখনওই কোনও অভিপ্রায়কে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে না।

গর্ভগৃহে প্রবেশের আগে আমরা কেন নন্দীর পুজো করি?

ভক্তরা শিবলিঙ্গের কাছে যাওয়ার আগে প্রথমে নন্দীর কাছে প্রার্থনা করেন। এই কাজটি মূলত ভগবান শিবের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। নন্দীজি একাগ্রতা এবং ধৈর্যেরও প্রতীক, এবং ভক্তরা গর্ভগৃহে প্রবেশের আগে নিজেদের মনকে শান্ত করতে ও সমস্ত বিভ্রান্তি ভুলে যেতে তার সামনে দাঁড়ান।