দিন দিন যে হারে দূষণ বাড়ছে, সেটা নতুন করে কহতব্য কিছুই নয়। রাস্তায় বেরোলেই ধুয়ো, ধোঁয়া। অনেকেই ভাবেন এতে বুঝি কেবলই ফুসফুস, ত্বক বা চুলের ক্ষতি হয়। কিন্তু না। দূষণ নিশ্চুপে ক্ষতি করে চলেছে চোখেরও। সাম্প্রতিককালে বায়ুদূষণের কারণে অনেকেরই চোখের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 

এক তো পিএম ২.৫-এর মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে কম বেশি সমস্ত শহরেই, সঙ্গে এই শীতের সময় যোগ হয়েছে ধোঁয়াশা। এর জেরেই চোখ কটকট করা থেকে চোখ জ্বালা, চুলকানোর মতো একাধিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সঙ্গে পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তো আছেই। 

বিশেষজ্ঞদের মতে চলতি বছরে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে চোখ সংক্রান্ত সমস্যা। কী নেই তাতে? ড্রাই আই, অ্যালার্জি, কনজাংটিভাইটিস, কর্নিয়ার প্রদাহ, ইত্যাদি। আর এই সমস্যা যে নির্দিষ্ট কোনও বয়সের মানুষদের হচ্ছে তা নয়। ৮ থেকে ৮০, সকলেই ভুক্তভোগী। জানা যাচ্ছে, কম বেশি সমস্ত শহরাঞ্চলে চোখ থেকে জল পড়া, আঠাল জাতীয় পদার্থ চোখ থেকে বের হওয়া, সকালে তাকাতে না পারা, ঘোলাটে দৃষ্টির মতো সমস্যা নিয়ে অনেকেই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। 

দূষণের সঙ্গে যোগ আছে অতিরিক্ত ফোন বা টিভি দেখা। এতে অজান্তেই চোখের মূল লুব্রেকেটিং লেয়ার যেটি, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দূষণের কারণে এটির ঘনত্ব কমছে, দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে চোখের আর্দ্রতা। ফলে ঘষা খাচ্ছে কর্নিয়া। আর এসবের কারণেই হুহু করে বাড়ছে কনজাংটিভাল প্রদাহ। ঠিকঠাক কাজ করছে না মেইবোমিয়ান গ্ল্যান্ড। সামান্য আলোও চোখ সহ্য করতে পারছে না। 

সবথেকে ভয়ঙ্কর কী জানেন? দূষণের কারণে চোখের যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকেই সেটা গ্লুকোমা, কনজাংটিভাইটিস বা ড্রাই আই ভেবে ভুল করছেন। ফলত চিকিৎসাও ভুল হচ্ছে। আই ড্রপ দিচ্ছেন চোখ ঠিক করতে, যাতে বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইডের মতো প্রিজারভেটিভস থাকে। এতে হিতে বিপরীত ঘটছে। জ্বালা, চুলকানি আরও বাড়ছে। বড়সড় ক্ষতি হচ্ছে চোখের। 

এছাড়া যাঁদের গ্লুকোমা আছে, বা ছানি পড়েছে তাঁদেরও সেই সমস্যা দূষণের কারণে আরও বাড়ছে। রেটিনার সমস্যাও দেখা দিচ্ছে কোনও কোনও ক্ষেত্রে। 

এদিকে রোজ অফিস, স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য কাজে বাইরে বেরোতেই হচ্ছে। দূষণ বা ধুলো, ধোঁয়া কোনওটাকেই এড়ানো সম্ভব নয়। এমনকী বাড়িতে থাকলেও নয়। তাহলে কী করণীয়? দূষণ এবং ক্ষতির হাত থেকে চোখকে রক্ষা করতে চাইলে চশমা বা সানগ্লাস পরুন। এতে কিছুটা হলেও ধুলো, ধোঁয়া সোজাসুজি চোখে লাগবে না। বাইরে থেকে ফেরার পরই চোখে জলের ঝাপটা দিন। চোখ ধুয়ে নিন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান। সামান্য অসুবিধা হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।