আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাজারো বন্ধুর ভিড়ে ঠাসা সোশ্যাল মিডিয়া, সপ্তাহান্তে পার্টি বা অফিসের জমজমাট আড্ডা- আপাতদৃষ্টিতে দেখলে সবই ঠিক আছে। কিন্তু চার দেওয়ালের মধ্যে ফিরলেই একরাশ শূন্যতা গ্রাস করে। অনেকের সঙ্গেই কথা বলার পরেও মনে হয়, ভিতরের কথা বোঝার মতো কেউ নেই। এই অনুভূতি নিছকই মনের ভুল বা সাময়িক বিষণ্ণতা নয়। আধুনিক গবেষণা বলছে, এই লাগাতার একাকিত্বের নেপথ্যে থাকতে পারে শরীরের একাধিক হরমোনের জটিল খেলা।
একাকিত্বকে এতদিন মূলত সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবেই দেখা হত। কিন্তু মনোবিদ ও হরমোন বিশেষজ্ঞরা এখন একমত যে, এর নেপথ্যে শারীরবৃত্তীয় কারণও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের আবেগ, অনুভূতি এবং সামাজিক আচরণের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি বিশেষ হরমোন। এদের ভারসাম্য বিগড়ে গেলেই মানসিক স্থিতিতে তার প্রভাব পড়ে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
কোন কোন হরমোন দায়ী?
১। অক্সিটোসিন: এই হরমোনকে ‘লাভ হরমোন’ বা ‘বন্ডিং হরমোন’ বলা হয়। প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বললে, কাউকে জড়িয়ে ধরলে বা আন্তরিক সামাজিক আদানপ্রদানে শরীরে এর ক্ষরণ বাড়ে। অক্সিটোসিন আমাদের মধ্যে বিশ্বাস, সহানুভূতি এবং সংযোগের অনুভূতি তৈরি করে। যখন আমাদের জীবনে সামাজিক সংযোগ কমে যায়, তখন অক্সিটোসিনের মাত্রা কমতে থাকে, যা আমাদের আরও বেশি একা করে তোলে।
২। কর্টিসল: এটি হল ‘স্ট্রেস হরমোন’। দীর্ঘস্থায়ী একাকিত্ব শরীরে কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে উদ্বেগ, বিরক্তি এবং মানসিক চাপ বাড়ে। মজার বিষয় হল, এটি একটি চক্রের মতো কাজ করে। একাকিত্বের কারণে কর্টিসল বাড়ে, আবার কর্টিসলের বাড়াবাড়ি আমাদের সামাজিক মেলামেশা থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়।
৩। সেরোটোনিন ও ডোপামিন: এগুলি ‘ফিল-গুড’ হরমোন নামে পরিচিত। সেরোটোনিন আমাদের মেজাজ ভাল রাখে আর ডোপামিন আনন্দের অনুভূতি জোগায়। ইতিবাচক সামাজিক অভিজ্ঞতা (যেমন- বন্ধুর প্রশংসা পাওয়া বা কারও সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসা) এই হরমোনগুলির ক্ষরণ বাড়ায়। একাকিত্বে ভুগলে এই হরমোনগুলির মাত্রা কমে যায়, ফলে জীবনে আনন্দের অভাব এবং শূন্যতাবোধ তৈরি হয়।
উপায় কী?
হরমোন বিশেষজ্ঞদের মতে একাকিত্বকে অবহেলা করার কোনও জায়গা নেই। এটি যে শুধু মানসিক কষ্ট দেয় তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদে শরীরের উপরও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই এর মোকাবিলা করতে হলে মন এবং শরীর, দুইয়েরই যত্ন নিতে হবে।
বাস্তব জগতে সংযোগ বাড়ান: ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের চেয়ে বাস্তব জীবনে একজন বা দু’জন আন্তরিক বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানো অনেক বেশি উপকারী। ফোনে কথা বলুন, দেখা করুন।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
শরীরচর্চা করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্ট্রেস হরমোন কমে এবং সেরোটোনিন ও এন্ডরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়ে।
শারীরিক স্পর্শ: পরিবার বা খুব কাছের বন্ধুদের আলিঙ্গন করুন। এতে অক্সিটোসিন বাড়ে। পোষ্যর সঙ্গে খেলা করলেও অক্সিটোসিন বাড়ে।
নতুন কিছু শিখুন: কোনও সৃজনশীল কাজ বা কর্মশালায় যোগ দিন। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলে একাকিত্ব কাটে এবং ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ে।
মনে রাখতে হবে, একাকিত্ব একটি জটিল শারীরিক ও মানসিক অবস্থা। তাই নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে, ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
