শরীর সুস্থ রাখতে আমরা কত খাবারই না খাই, কিন্তু প্রকৃতির দেওয়া কিছু রঙিন শাক-সবজির উপকারিতা সত্যিই অবাক করার মতো। বিশেষ করে লাল রঙের সবজি যেমন লাল ক্যাপসিকাম, বিট, লাল বাঁধাকপি বা টমেটো—এগুলো শুধু রান্নায় রং যোগ করে না, শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, লাল সবজি এখন “মিরাকুলাস ফুড” হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে, কারণ এগুলো নানা গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।
লাল রঙের সবজির মধ্যে যে উজ্জ্বল রং দেখা যায়, তার পেছনে আছে অ্যান্থোসায়ানিন ও লাইকোপিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এই উপাদান দু’টি শরীরে ফ্রি র্যািডিক্যাল কমিয়ে কোষকে সুরক্ষা দেয়। গবেষণা বলছে, নিয়মিত লাল সবজি খেলে কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। বিটের মতো সবজি রক্ত পরিশোধন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তসঞ্চালন উন্নত করতে বিশেষভাবে কার্যকর। এমনকী লাল বাঁধাকপির মতো খাবারে থাকে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে এবং প্রচুর ফাইবার, যা দেহের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
লাল সবজির আরেকটি বড় গুণ হল রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁদের জন্য লাল ক্যাপসিকাম ও বিট বিশেষ উপকারী। এই সবজিগুলো ধীরে হজম হয়, ফলে রক্তে সুগার হঠাৎ বাড়তে পারে না। একই সঙ্গে এগুলোর ফাইবার অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফলে হজমশক্তিও ভাল থাকে।
হৃদরোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রেও লাল সবজির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও খনিজ উপাদান রক্তচাপ কমাতে পারে এবং ধমনীর প্রদাহ কমায়। অর্থাৎ যারা হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই সবজি থাকলে লাভবান হওয়া নিশ্চিত।
পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতেও লাল সবজি কার্যকর। লাল ক্যাপসিকামের ভিটামিন-সি ত্বক টানটান করে, আর বিট রক্ত বিশুদ্ধ করে মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে।
প্রতিদিনের প্লেটে এক মুঠো লাল সবজি যোগ করলেই শরীর পাবে প্রাকৃতিক সুরক্ষার ঢাল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু লাল সবজি খেয়েই সব রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এটি অবশ্যই সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সাথে মিলিয়ে খেতে হবে। যাদের কিডনি বা বিশেষ স্বাস্থ্যসমস্যা রেছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়েটে পরিবর্তন করা উচিত।
