আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের এই ফলটি তার টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়। স্যালাড হোক বা কন্টিনেন্টাল রান্না, আনারস মানেই স্বাদে যুক্ত হবে এক নতুন মাত্রা। তবে শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও এর জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে আনারসের রসকে বলা হয় একাধিক রোগের মহৌষধ। এর নেপথ্যে রয়েছে ব্রোমেলিন নামক এক বিশেষ এনজাইম এবং ভিটামিন ও খনিজ। এক গ্লাস তাজা আনারসের রস শরীরকে ভিতর থেকে সতেজ করে তুলতে পারে। জেনে নেওয়া যাক, নিয়মিত আনারসের রস পানের কয়েকটি অসাধারণ উপকারিতা।

১। হজমশক্তি বাড়ায়
আনারসের সবচেয়ে বড় গুণ হল এর হজমশক্তি বাড়ানোর ক্ষমতা। এর মধ্যে ‘ব্রোমেলিন’ নামক একটি প্রোটিওলাইটিক এনজাইম থাকে, যা প্রোটিনকে ভেঙে ক্ষুদ্র অণু বা অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত করতে সাহায্য করে। ফলে আমিষ বা গুরুপাক খাবার খাওয়ার পর এক গ্লাস আনারসের রস খেলে তা হজমে সহায়তা করে এবং পেট ফাঁপা, গ্যাস বা বদহজমের মতো সমস্যা দূর করে। যাঁদের অগ্ন্যাশয় ঠিক মতো কাজ করে না, তাঁদের ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই

২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে
আনারসের রস ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস। ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত করে তোলে। এর মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয়। ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি, ফ্লু এবং অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীর লড়াই করার শক্তি পায়।
৩। প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
ব্রোমেলিনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শরীরকে প্রদাহ বা জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া। এটি একটি শক্তিশালী প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। আর্থ্রাইটিসের কারণে হওয়া গাঁটের ব্যথা, পেশির যন্ত্রণা বা সাইনাসের সমস্যা কমাতেও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত। এমনকী, অতিরিক্ত ব্যায়াম বা অস্ত্রোপচারের পর ফোলা ভাব এবং ব্যথা কমাতেও আনারসের রস অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
৪। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
হাড়কে মজবুত রাখতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ম্যাঙ্গানিজ নামক খনিজটিও অত্যন্ত জরুরি। এক গ্লাস আনারসের রস দৈনিক ম্যাঙ্গানিজের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। ম্যাঙ্গানিজ হাড়ের গঠন এবং ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। এর সঙ্গে থাকা কপার সুস্থ কানেক্টিভ টিস্যু তৈরিতেও সহায়তা করে। ফলে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমে।
৫। ত্বক ও চোখের জন্য উপকারী
আনারসের রসে থাকা ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ চোখের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমায়।
৬। হৃদযন্ত্রের খেয়াল রাখে
আনারসের রসে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। ব্রোমেলিন রক্ত জমাট বাঁধতেও বাধা দেয় বলে কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, যা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।

তবে আনারসের রস অত্যন্ত উপকারী হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এটি প্রাকৃতিক ভাবে মিষ্টি হওয়ায়, যাঁদের ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর অম্লতার জন্য কারও কারও মুখে বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে। সব সময় চেষ্টা করুন টাটকা রস পান করার, কারণ টিনজাত রসে অতিরিক্ত চিনি মেশানো থাকতে পারে।
সুতরাং, শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু পানীয় হিসেবেই নয়, আনারসের রস স্বাস্থ্যের জন্যও এক অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠতে পারে।