আজকাল ওয়েবডেস্ক: শরীর সুস্থ রাখতে আমরা অনেক ব্যায়াম করি, কিন্তু পেলভিক ফ্লোর কতটা সুস্থ আছে, তা নিয়ে সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ এই অংশের স্বাস্থ্যই নির্ধারণ করে যৌনজীবনে আনন্দ কতটা উপভোগ করা যাবে। শিকাগোর পেলভিক ফ্লোর বিশেষজ্ঞ জ্যানেল হাওয়েল জানিয়েছেন, পেলভিক ফ্লোর দুর্বল বা অতিরিক্ত টানটান হলে যৌন মিলনে ব্যথা হতে পারে এবং অর্গ্যাজমেও বাধা আসে। আমেরিকায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা যায়।
কেগেল ব্যায়ামের গুরুত্ব

ড. হাওয়েল বলেন, কেগেল ব্যায়াম আসলে সেই প্রয়াসকে অনুকরণ করে, যা আমরা গ্যাস বা প্রস্রাব আটকাতে করি। নিয়মিত এভাবে সংকোচন ও শিথিলতার অনুশীলন করলে পেলভিক ফ্লোর মজবুত হয়। তবে শুধু চেপে ধরা নয়, প্রতিবার শিথিল হওয়াটাও সমান জরুরি।
আধুনিক জীবনের বিপদ: বেশি বসে থাকা
আমরা দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকি—এতে কোমর ও হিপের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। ফলস্বরূপ কোমরব্যথা, পেলভিক ব্যথা এবং যৌন মিলনের সময় অস্বস্তি বাড়ে। “অনেকেই বলেন তারা একটাই ভঙ্গি করতে পারেন, কারণ শরীর শক্ত বা অন্য ভঙ্গিতে ব্যথা হয়,” জানিয়েছেন ড. হাওয়েল।
ফিটনেস ব্যায়াম ও যৌন সহনশীলতা
কেটলবেল সুইং: নিয়মিত করলে কোমর ও হিপ নমনীয় হয়, যৌনতার সময় ছন্দময় নড়াচড়ায় সহায়তা করে।
প্ল্যাঙ্ক: পুরো কোর মাংসপেশি একসঙ্গে কাজে লাগে, ফলে সহনশীলতা ও শক্তি বাড়ে। “শুরুতে মাত্র ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখলেও উপকার মিলবে,” বলেন ড. হাওয়েল।
কোর মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণ: কখনও কখনও এটি যৌন উত্তেজনাও বাড়াতে পারে, মন্তব্য করেন গবেষক ড. হেরবেনিক।
যোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ভূমিকা

যোগব্যায়ামের গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস পেলভিক ফ্লোরকে শিথিল করে এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যা শরীরকে শান্ত রাখে।
ড. হেরবেনিক বলেন, এতে যোনিপথে প্রবেশ আরামদায়ক হয়, পুরুষদের ইরেকশন সহজ হয়। কারণ মানসিক চাপ ইরেকশনের বড় শত্রু।
ড. হাওয়েল আরও যোগ করেন, “যোগ না করলেও অন্তত শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন। মাদুরে শুয়ে হাত পেটে রেখে গভীর শ্বাস নিলেই নার্ভাস সিস্টেম শান্ত হবে এবং যৌনজীবনে আনন্দ বাড়বে।”
পেলভিক ফ্লোরের স্বাস্থ্য কেবল শারীরিক ব্যথা বা অসুবিধা দূর করার জন্য নয়, বরং যৌনজীবনের আনন্দ, আত্মবিশ্বাস ও সম্পর্কের মানোন্নয়নের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত। নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম, কোর শক্তিশালী করা, যোগব্যায়াম ও সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চা যৌনজীবনকে অনেক বেশি উপভোগ্য ও সুস্থ করে তুলতে পারে। যৌন বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত ৩০ মিনিট ধরে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখলে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্যালোরি খরচ করা সম্ভব। তবে এখানেই বাধা—এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গড়ে একটি হেটেরোসেক্সুয়াল মিলন স্থায়ী হয় মাত্র সাড়ে পাঁচ মিনিট। তাই পূর্ণাঙ্গ ‘ওয়ার্কআউট’ করতে হলে চাই গড়ের বাইরে সময় ধরে সম্পর্ক।
যৌন মিলন শুধুই আনন্দের বিষয় নয়, বরং এক অভিনব শরীরচর্চার মাধ্যমও বটে। তবে শারীরিক ক্ষমতা, স্বাস্থ্য এবং সঙ্গীর আরামের কথা মাথায় রেখেই ভঙ্গি নির্বাচন করতে হবে। আর যদি সময় ও উদ্যম ধরে রাখা যায়, তবে শোবার ঘরই যে জিমে পরিণত হতে পারে, তা গবেষণাই প্রমাণ করছে।
